সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে ‘তৃতীয় পক্ষের ইন্ধনের’ অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। শিক্ষামন্ত্রীর ওই অভিযোগের জবাবে গতকাল সোমবার দুপুরে প্রেস ব্রিফিং করেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আমরণ অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। ১৪ শিক্ষার্থী উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অনশন করছেন।
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, উপাচার্যের বাসভবনের শুধু বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। গ্যাস, পানি ও ইন্টারনেটের লাইন কাটা হয়নি।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মুহাইমিনুল বাশার রাজ বলেন, ‘বৃষ্টি ও শীতের প্রকোপ বাড়ায় অনশনকারীদের স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে অনশনস্থলে শামিয়ানা টানানো হয়েছে এবং জায়গাটি গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত রাখা হয়। এমনকি ওয়াশরুম ও হাসপাতালে যাওয়ার প্রক্রিয়া আমাদের সহপাঠীরা ভিডিও করে রাখছেন। এমতাবস্থায় অনশনের সততাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা দুঃখজনক ও অপ্রত্যাশিত। ’
শাবিপ্রবির উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমদের পদত্যাগের দাবিতে গতকাল বিকেলে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। আগের দিনের ঘোষণা অনুযায়ী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী ও গণমাধ্যমকর্মী ছাড়া কাউকে উপাচার্যের বাসভবনে যেতে দেননি তাঁরা। সিটি করপোরেশনের দুই কাউন্সিলর উপাচার্যের জন্য খাবার নিয়ে গেলে তাঁদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের নেতৃত্বে প্রক্টরিয়াল বডি অনশনরতদের অনশন ভাঙাতে গেলে তাঁরা খাবার গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান।
আন্দোলনের সমর্থনে বিকেলে সিলেট নগরে ‘সিলেটের নাগরিকবৃন্দ’র পক্ষে ‘নাগরিক সংহতি’ অনুষ্ঠিত হয়। সিলেটের নাগরিকবৃন্দের আহ্বায়ক এমাদউল্লাহ শহীদুল ইসলামের সভাপতিত্বে গণতন্ত্রী পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. আরশ আলী, সিপিবি নেতা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা বেদানন্দ ভট্টাচার্যসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন। তাঁরা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষার্থীরা ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করে এলেও সরকার সংকট সমাধানের জন্য কার্যকর কোনো ভূমিকা পালন করেনি। ভিসি অপসারণ আন্দোলনে সারা দেশের মানুষ সংহতি জানাচ্ছে, সমর্থন করছে। কিন্তু ভিসি নির্লজ্জভাবে পদ আঁকড়ে আছেন।
প্রক্টরিয়াল বডিকে ফিরিয়ে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা : বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আলমগীর কবীরের নেতৃত্বে প্রক্টরিয়াল বডির কয়েকজন সদস্য বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে খাবার নিয়ে আন্দোলনস্থলে যান। শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেন। অনশনকারীরা তাতে সম্মত হননি। পরে তাঁরা উপাচার্যের বাসভবনের দিকে যেতে চাইলে আন্দোলনকারীরা বাধা দেন।
এ সময় প্রক্টর বলেন, ‘আমরা শুনেছি, ভিসি স্যার অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আমরা উনার জন্য কিছু ওষুধ ও খাবার নিয়ে এসেছি। আমরা অনুরোধ করছি, আমাদের ভেতরে ঢুকতে দিন। স্যারের সঙ্গে দেখা করেই চলে আসব। ’ তবে অনশনরত এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমরা ২৮ জন শিক্ষার্থী না খেয়ে আছি। আমাদের অসুস্থতার চেয়ে ভিসির অসুস্থতা বড় হয়ে গেল!’
বহিরাগতদের প্রবেশে বাধা : আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষের ইন্ধন থাকতে পারে বলে শিক্ষামন্ত্রীর রবিবারের মন্তব্যের পর গতকাল সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশে নজরদারি শুরু করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সকাল ৮টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটক এলাকার প্রবেশপথ এবং চেতনা-৭১-এর কাছে তাঁরা অবস্থান নেন।
হাসপাতাল থেকে অনশনস্থলে ৭ শিক্ষার্থী : অনশন শুরু করে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে সাতজন কিছুটা সুস্থ হয়ে ক্যাম্পাসে অনশনস্থলে ফিরেছেন। দুুপুরে তাঁরা হাসপাতাল থেকে ফেরেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মুহাইমিনুল বাশার রাজ। তিনি বলেন, যাঁরা ফিরেছেন তাঁদের শারীরিক অবস্থা ভালো না।
অস্ত্রোপচারেও অনশন ভাঙেননি : অনশনের দ্বিতীয় দিন বিরতি দিয়ে দিয়ে পেট ব্যথা হচ্ছিল সমাজবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহীন শাহরিয়ার। রবিবার বিকেলে হঠাৎ পেট ব্যথা বাড়লে চিকিৎসকরা তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। সেখানে তাঁর অ্যাপেন্ডিসাইটিস ধরা পড়ে। পরে রাতে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়। এর পরও তিনি অনশন ভাঙেননি।
সিলেট আওয়ামী লীগের নিন্দা : উপাচার্যের বাসভবনে খাবার নিয়ে যেতে বাধা দেওয়ার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ। সিলেট আওয়ামী লীগের দুই ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পক্ষ থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আন্দোলনকারীদের এমন কর্মকাণ্ডকে আওয়ামী লীগ কোনো অবস্থায়ই সমর্থন করতে পারে না।