আবাহনীর হ্যাটট্রিক শিরোপা

৩৭ বছরে দাঁড়িয়ে অলক কাপালি শেষ চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু তিনি ৮ নম্বরে নামার আগেই ম্যাচ আবাহনীর নাগালে। তবু শেষ ওভারে ম্যাচের উত্তেজনা ফিরিয়ে এনেছিলেন অলক। কিন্তু শেষমেশ জয়ী আবাহনী লিমিটেডই, ৮ রানের জয়ে নিশ্চিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী ক্লাবটির হ্যাটট্রিক শিরোপা।

লিগের অঘোষিত ফাইনালে পরিণত হওয়া ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে করা ৭ উইকেটে ১৫০ রান নিয়ে আবাহনীর তাঁবুতে স্বস্তির হাওয়া বইতে থাকার কথা। হোক মিরপুরের সেরা উইকেট, তবু প্রাইম ব্যাংকের তামিম ইকবাল নেই। রনি তালুকদার আর মোহাম্মদ মিঠুনের উইকেট নিয়েই যেটুকু দুর্ভাবনা। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের করা প্রথম ওভারের তৃতীয় বল পুল করতে গিয়ে পথের কাঁটা রনি ফিরে যান। প্রাইম ব্যাংকের ছকে মিডল অর্ডারে খেলাটা ধরেন মিঠুন। তাঁকেও ব্যক্তিগত ৬ রানে থামিয়ে দেন আরাফাত সানি। ৪৬ রানে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে আবাহনীর ডাগ আউট আরো নির্ভার। একদিকে ঝুলে ছিলেন ওপেনার রুবেল মিয়া। তাতে টুকটুক করে রান উঠলেও রানরেটের মিটার বাড়ছিল হু হু করে। লোয়ার অর্ডারে নেমে অলক ১৭ বলে ৩ ছক্কায় ৩৪ রান না করলে ম্যাচটা একপেশেভাবেই শেষ হতো। অলকের কল্যাণে ম্যাড়মেড়ে ম্যাচটাই ‘জীবন’ পায়। শেষ ওভারে ১৬ রান তো টি-টোয়েন্টিতে এখন ডালভাত! তবে ৭ রানের বেশি যোগ হয়নি প্রাইম ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে। অবশ্য আবাহনী পেসার শহিদুল ইসলামের ‘বিমার’টা স্কয়ার লেগ আম্পায়ার তানভীর আহমেদের দৃষ্টি এড়িয়ে না গেলে দুই দলের ব্যবধান আরো কমত, ফলও বদলাতে পারত।

একই আম্পায়ারের দৃষ্টিভ্রম হয়েছে প্রথম ইনিংসেও। মুস্তাফিজুর রহমানের তৃতীয় বলটাই আঘাত হেনেছিল লিটন দাসের প্যাডে। সাধারণত আবেদন নাকচ হয়ে গেলে প্রতিক্রিয়া দেখান না মুস্তাফিজ। কিন্তু এদিন অনেকটা সময় কোমরে হাত দিয়ে আম্পায়ার তানভীরের দিকে তাকিয়ে ছিলেন বাঁহাতি এ পেসার। টিভি রিপ্লে দেখার পর মুস্তাফিজ কিংবা প্রাইম ব্যাংক ক্রিকেটারদের হতাশার কারণ বুঝতে কোনো অসুবিধা হয়নি।

kalerkanthoসিদ্ধান্তটা উল্টো হলে দলীয় ১ রানে দুই ব্যাটসম্যানকে খুইয়ে বসত আবাহনী! মুস্তাফিজের প্রথম বল জায়গায় দাঁড়িয়ে চালাতে গিয়ে তার আগেই ফিরে গেছেন নাঈম শেখ। ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারে আবাহনীর আরেক ওপেনার মুনিম শাহরিয়ারকে তুলে নেন রুবেল হোসেন। লিটন ‘হিউম্যান এরর’ সুবিধা পাওয়ায় বিপদের মেঘ আরো ঘনীভূত হয়নি আবাহনীর ভাগ্যাকাশে। লিটনও দারুণ কিছু স্ট্রোকে সোনালি রোদে ভাসিয়ে দিচ্ছিলেন দলকে। কিন্তু প্রাইমের স্পিনার নাহিদুল ইসলামকে তুলে মারতে গিয়ে লং অফে ক্যাচ দিয়ে ১৯ রানে থামেন লিটন। অবশ্য এই সাফল্যে সমান অবদান ফিল্ডার এনামুল হকের। বলের ওপর চোখ রেখে অনেকটা পেছনে দৌড়ে ক্যাচটা নেন প্রাইম ব্যাংক অধিনায়ক। এ অবস্থায় নাজমুল হোসেন ও মোসাদ্দেক হোসেন ‘গিয়ার’ বদলে জুটি গড়ায় মন দেন। চতুর্থ উইকেটে এ দুজনের ৭০ রান শেষদিকে সাইফউদ্দিনকে তুলে মারার স্বাধীনতা দেয়। ১৩ বলে ২১ রানে অপরাজিত থাকা এই অলরাউন্ডার ৩৬ রানে ৪ উইকেট নিয়ে জিতেছেন ম্যাচসেরার পুরস্কার।

সকালের বৃষ্টির কারণে প্রাইম দোলেশ্বর-মোহামেডান ম্যাচ কমে আসে ১৩ ওভারের লড়াইয়ে। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা মোহামেডানের শুরুটা ছিল আরেকটি সম্ভাব্য হারের মঞ্চ। কিন্তু কামরুল ইসলাম রাব্বির করা ইনিংসের শেষ ওভারে ২৭ রান তুলে সেই মঞ্চেই সুপার লিগে প্রথম জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলে মোহামেডান। তাদের ৫ উইকেটে ১০৩ রানের ইনিংসে অধিনায়ক শুভাগত হোমের ৮ বলে ২৩* রানের ভূমিকা অপরিসীম। পরের অর্ধে প্রতিপক্ষের দুই পেসার রুবেল মিয়া ও ইয়াসির আরাফাতের তোড়ে স্রেফ উড়ে যায় প্রাইম দোলেশ্বর। প্রথমজন ৫ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন। আর ইয়াসিরের শিকার ৪। তাতে ৮১ রানেই গুটিয়ে যায় দোলেশ্বর। এই জয়ের পরও সুপার লিগের পয়েন্ট তালিকায় মোহামেডানের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি, ছয়েই আছে। অন্যদিকে হারলেও তৃতীয় স্থানে থেকেই এবারের লিগ শেষ করল প্রাইম দোলেশ্বর। দিনের শেষ ম্যাচে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স ৩৫ রানে হারিয়েছে শেখ জামালকে।