মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা পার হওয়ার আগেই আফগানিস্তানের ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে তালেবান যোদ্ধারা। ২০ বছর পর হঠাত্ করে কট্টর তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতায় আসায় প্রতিবেশী দেশগুলো বিশেষত এ অঞ্চলের ভূ-রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ অনেকটাই বদলে গেছে। প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান, ভারত, চীন ও ইরানের বড় স্বার্থ রয়েছে আফগানিস্তান ঘিরে। তালেবান আবারও ক্ষমতায় আসায় এসব দেশ চাইছে তাদের সঙ্গে একটি সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করতে।
তালেবান ক্ষমতা দখলের পর অনেক দেশ তাদের দূতাবাস বন্ধ করে নাগরিকদের ফেরাতে তত্পর হলেও চীন তাদের দূতাবাস এখনো খোলা রেখেছে। তারা তালেবান নেতৃত্বের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ বজায় রাখছে। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিং গত সপ্তাহে জানান, তালেবানের সঙ্গে তাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। তালেবান বেইজিংয়ের সঙ্গে সুম্পর্ক বজায় রাখতে চায়।
তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর কঠিন সমীকরণের মুখে পড়েছে ভারত। আফগানিস্তান থেকে ভারতীয় নাগরিকদের সরিয়ে আনা অব্যাহত রয়েছে। দুই দশক ধরে তালেবানবিরোধী অবস্থান বজায় রেখেছে ভারত সরকার। কিন্তু পরিস্থিতি বদলেছে। গত ১৭ আগস্ট মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তালেবানের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক স্থাপন করা যায় সে ব্যাপারে সেখানে আলোচনা হয়। ভারত সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে’কে বলেন, অন্তর্বর্তীকালে তালেবান কী করে আমরা সেটা খোলা মনে নজর রাখব। ২০ বছর পর তাদের কী পরিবর্তন এসেছে সেটাও মূল্যায়ন করব।
নিরাপত্তা ও কৌশলগত চ্যালেঞ্জের মুখেও রয়েছে ভারত। আফগানিস্তানের ঘাঁটি থেকে ভারতবিরোধী জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা এবং জয়শ-ই-মোহাম্মদ কর্মকাণ্ড চালিয়ে এসেছে। বিভিন্ন সময় ভারতে হামলা চালিয়েছে। তালেবান ক্ষমতা নেওয়ার পর এসব সংগঠন আরো বেশি সাহস সঞ্চার করতে পারে। তাদের ভারতবিরোধী কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার সুযোগ আরো বাড়তে পারে।
কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত সরকারের জন্য তালেবান বড় মাথা ব্যথার কারণ। সেখানকার ইসলামিক গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে এর আগেও তালেবান ও আল-কায়দার সম্পর্ক ছিল। ক্ষমতায় এসে তালেবান তাদের সমর্থন দিক—সেটি কখনো ভারত চাইবে না। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের নবনীতা বেহেরা ডিডব্লিউ’কে বলেন, কৌশলগতভাবে এটি পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে তালেবান নেতৃত্বের সম্পর্ক কতটা বিকশিত হয় এবং তারা কাশ্মীরে প্রক্সি যুদ্ধে ইসলামাবাদকে কতটা সহায়তা করে তার ওপর নির্ভর করছে।
পাকিস্তানের বিশ্বাস, অতীতে আফগানিস্তানে প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ পেয়ে ভারত পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী তত্পরতায়, বিশেষ করে বালুচিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদে মদত দিয়েছে এবং কাবুলে আশরাফ ঘানি সরকার তাতে সাহায্য করেছে। আপাতদৃষ্টিতে পাকিস্তান সরকার খুশি হলেও পাকিস্তানের একাংশের আশঙ্কা আফগানিস্তানে তালেবানের নিয়ন্ত্রণ পাকিস্তানের ভেতর সন্ত্রাসী এবং ধর্মীয় কট্টরপন্থি গোষ্ঠীদের উত্সাহিত করবে, শক্তিশালী করবে। বিশেষ করে তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ
যুক্তরাষ্ট্র সেনা সরিয়ে নেওয়াতে খুশি আফগানিস্তানের আরেক প্রতিবেশী দেশ ইরান। তবে তারা দেশটির স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন। বর্তমানে সাড়ে সাত লাখ আফগান শরণার্থী ইরানে অবস্থান করছে। তালেবান ক্ষমতায় আসায় এই সংখ্যা আরো বাড়ার আশঙ্কা করছে দেশটি। এছাড়া অতীতে ইরান-তালেবান সম্পর্ক কখনোই আন্তরিক ছিল না। এ অবস্থায় বিশ্লেষকরা মনে করছেন, স্থিতিশীল আফগানিস্তান এ অঞ্চলে উদ্বেগ কিছুটা হলেও কমাতে পারে।