ব্রয়লার মুরগির দাম ছুঁয়েছে ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা। ফলে নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে এক সময়ের সবচেয়ে কম দামি আমিষ- ব্রয়লার মুরগি।
দাম বাড়ার পেছনে, পোলট্রি খাতের বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দায়ী করছেন, বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। রোজা সামনে রেখে বাড়ছে গরু আর খাসির মাংসের দামও। মাংস ব্যবসায়ী সমিতিও স্বীকার করেছে ৫০০ টাকার বেশি গরুর মাংসের দাম হওয়া অযৌক্তিক।
এদিকে, রমজানের আগে নতুন করে বাড়েনি কোন মুদি পণ্যের দাম। তবে, আগে থেকেই বাড়তি দামে বিক্রি হওয়ায় স্বস্তি নেই ক্রেতাদের মনে। অন্যদিকে স্বস্তি নেই মাছের বাজারে।
দাম বেড়েছে ইলিশ ও চিংড়ি মাছের। এছাড়াও সরবরাহের অজুহাতে দাম বেড়েছে কিছু সবজির। তবে রোজার আগে আর কোন পণ্যের দাম না বাড়ার প্রত্যাশা ক্রেতা-বিক্রেতার।
ব্রয়লার মুরগির কেজি ২৫০ টাকা পর্যন্ত ওঠার পর এখন কিছুটা কমে দর ঠেকেছে ২৪০ টাকায়। দুই মাস আগেও ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হয়েছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকায়।
সোনালি মুরগিও এক সপ্তাহর ব্যবধানে কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ টাকা। ৩০ টাকা বেড়ে দেশি মুরগির কেজি এখন ৫৮০ টাকা।
বিক্রেতারা বলছেন, আগে কখনোই তাঁরা ২৪০ টাকা কেজিতে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি করেননি। মূলত বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় এই রেকর্ড দাম সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
আর পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশনের দাবি, কর্পোরেট কোম্পানিগুলো এক চেটিয়াভাবে মুরগীর বাচ্চা ও ফিডের দাম বাড়িয়ে বাজার অস্থিতিশীল করছে।
ফলে ছোট খামারিরা আর টিকতে পারছে না। এ কারণেই মুরগির দাম নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। বড়রা ছোটদের গিলে ফেলে বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে।
খামারিরা বলছেন, যে টাকা খামারে মুরগির পেছনে ব্যয় হবে, বাজার পড়তির দিকে গেলে সেই টাকা আর উঠে আসবে না। যে কারণে সংকট তৈরি হয়ে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে।
অন্যদিকে, রমজান সামনে রেখে গেলো দু’সপ্তাহ ধরেই বাড়ছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। গরুর মাংস ৭০০ থেকে ৭৫০ এবং খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ১,১০০ থেকে ১,৩০০ টাকা কেজি।
মাংস ব্যবসায়ী সমিতি স্বীকার করেছে, ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকার বেশি দামে গরুর মাংস এবং ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার বেশি দামে খাসির মাংস বিক্রি করাটা অযৌক্তিক।
টিসিবির তথ্য বলছে গেলো এক বছরে ব্রয়লার মুরগীর দাম বেড়েছে ৪০ দশমিক ৯৮ শতাংশ। গরুর মাংস ১৬ দশমিক ৩৯ এবং খাসীর মাংসের দাম বেড়েছে ২০ দশমিক ৫৯ শতাংশ।
শুক্রবার রাজধানীর কাওরানবাজারে ক্রেতারা প্রতি কেজি ছোলা কিনছেন ৯৫ টাকায়। আর সরকারের বেধে দেয়া ১১২ টাকার আশেপাশেই বিক্রি হচ্ছে চিনি।
বাড়েনি সয়াবিন তেলের দামও, ৫ লিটারের প্রতি বোতল বিক্রি হচ্ছে ৮৮০-৯০০ টাকায়। আর দেশি মসুর ডাল কেজি ১৪০ টাকা।
যদিও ক্রেতারা বলছেন, নতুন করে দাম না বাড়লেও নিত্যপণ্য নিয়ে কোন স্বস্তি নেই। কারণ আগে থেকেই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের পণ্য।
কাওরানবাজার মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবচেয়ে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। এক সপ্তাহের ব্যবধানে ১২০০ টাকার প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১৫০০ টাকায়।
চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১১০০ টাকা দরে। এক কেজি রুই-কাতলা মাছ কিনতে ক্রেতাকে গুণতে হচ্ছে ৩৫০-৫০০ টাকা। তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস মাছও বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকায়।
কাঁচাবাজারে সরবরাহ কিছুটা কমে যাওয়ায় দামও বেড়েছে বেগুন ও সজনে ডাটার। অন্যদিকে দাম কমে কাঁচামরিচ ১১০ আর টমেটো ও শসা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০-৪০ টাকা দরে।
চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা কেজি, চিকন চাল বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৫ টাকা কেজি আর নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকা কেজি।
বাজারে নতুন রসুন আসতে শুরু করায় সপ্তাহ ব্যবধানে কমেছে দেশি ও আমদানি করা রসুনের দাম। দাম কমে বর্তমানে বাজারে আমদানি করা রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, আর দেশি রসুন বিক্রি হচ্ছে কেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকা।