নিজস্ব প্রতিবেদক :
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, আগামী সপ্তাহ থেকে অনলাইন সংবাদ পোর্টালগুলোর নিবন্ধন শুরু হবে। আজ সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা জানান তিনি। তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে যে অনলাইন সংবাদ পোর্টালগুলো আছে, সেগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে আমরা দরখাস্ত আহ্বান করেছিলাম। এ পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৫৯৭টি দরখাস্ত জমা পড়েছে। সেগুলো তদন্ত করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। পরবর্তী সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগসহ আলোচনা করে আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানিয়েছিলাম যত দ্রুত সম্ভব অনলাইনগুলোর তদন্ত শেষ করে তথ্য মন্ত্রণালয়কে জানানোর জন্য, যাতে আমরা নিবন্ধনের কাজটি শুরু করতে পারি।’
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘আমাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা যে কয়েক শ অনলাইনের তদন্ত শেষ করেছে, তার প্রতিবেদন আজ বা কালকের মধ্যে আমাদের কাছে পাঠাবে। আমরা আগামী সপ্তাহ থেকে অনলাইনগুলোর নিবন্ধন দেওয়া শুরু করব। এ প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লাগবে। কারণ, সাড়ে তিন হাজারের বেশি অনলাইনের তদন্ত শেষ করা সহজ কাজ নয় এবং কয়েকটি সংস্থা তদন্ত করছে। যে কটি আমরা পাব, সেগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিবন্ধন দেওয়া শুরু করব।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তবে ভবিষ্যতেও যেন অনলাইন সংবাদ পোর্টাল কেউ করতে পারে, সে জন্য আমরা পরবর্তী সময়ে আবার দরখাস্ত আহ্বান করব, কারণ এখানে যে অনলাইনগুলো আছে, সেগুলোতেই তো এই মাধ্যম শেষ হয়ে যেতে পারে না।’ হাছান মাহমুদ বলেন, ‘পত্রিকা যেমন যে কেউ যেকোনো সময় বের করতে পারে, ভবিষ্যতে তেমনি অনলাইনও বের করতে পারে। কিন্তু ভবিষ্যতে অনলাইন পোর্টাল চালু করতে হলে একটি প্রক্রিয়ায় অনুমতির মাধ্যমে করতে হবে। পত্রিকা বের করতে চাইলে যেমন নামের ছাড়পত্র নিতে হয়, অনলাইনের ক্ষেত্রেও একটি প্রক্রিয়া অবলম্বন করে বের করতে হবে। আইপি টিভি, আইপি রেডিওর জন্যও আমরা দরখাস্ত আহ্বান করেছিলাম। এ ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে সবাইকেই রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।’
টেলিভিশনে ডাবিং করা বিদেশি সিরিয়াল প্রচারে পূর্বানুমতির জন্য প্রিভিউ কমিটি
টেলিভিশনে ডাবিং করা বিদেশি সিরিয়াল প্রচারকে নিয়মনীতির আওতায় আনা প্রসঙ্গে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন টেলিভিশনে যে ডাবিং করা বিদেশি সিরিয়াল প্রচার করা হয়, সেগুলোর জন্য অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়েছে এবং অনুমতির জন্য দরখাস্ত পড়েছে অনেক। এগুলো একটা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে যাওয়া প্রয়োজন। দুই-তিন ঘণ্টার একটি ছবি যেমন মুক্তি পেতে হলে সেন্সর বোর্ড হয়ে আসতে হয়, তেমনি এসব সিরিয়াল, যেগুলোর কোনোটা ৫০, কোনোটা ৩০ পর্ব, আবার প্রতিটি পর্ব হচ্ছে এক বা আধা ঘণ্টার, অর্থাৎ একটি ছবি হয় দুই-তিন ঘণ্টা আর এগুলো একেকটা ৪০ থেকে ৫০ ঘণ্টা, সুতরাং এগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়া অনুমোদন দেওয়া সমীচীন নয়। হাছান মাহমুদ বলেন, সে লক্ষ্যে একটি বাছাই কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে গত ২৭ নভেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে।
মোবাইল ফোন কোম্পানিগুলোর ভিডিও কনটেন্ট আপলোড আসবে শৃঙ্খলায়
হাছান মাহমুদ বলেন, ‘মোবাইল ফোন কোম্পানি নানা ধরনের ভিডিও কনটেন্ট আপলোড করে ইউটিউব বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছাড়ছে, আবার সেখানে বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, সেখানেও তারা ব্যবসা করছে। এটির লাইসেন্স তাদের দেওয়া হয়নি। তাদের মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক পরিচালনা করার লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এটি বন্ধ করার জন্য ইতিমধ্যে আমরা টেলিযোগাযোগ বিভাগকে চিঠি দিয়েছি, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য আমরা আন্তমন্ত্রণালয় সভায় বিষয়গুলো আলোচনা করেছি। এ ধরনের চলমান বিষয়গুলোর ব্যাপারে বিটিআরসি সিদ্ধান্ত নেবে। এটিকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে আমরা বদ্ধপরিকর। কারণ, যে কেউ চাইলেই লাইসেন্সবিহীন ব্যবসা করতে পারে না।’
অনলাইন পত্রিকার ভিডিও কনটেন্ট এবং টিভি চ্যানেলগুলোর অনলাইন চালাতেও অনুমতি লাগবে
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, অনলাইন পত্রিকার ভিডিও কনটেন্ট এবং টিভি চ্যানেলগুলোর অনলাইন চালাতেও অনুমতি লাগবে। তিনি বলেন, ‘শুধু পত্রিকাগুলো যে অনলাইনে ভিডিও কনটেন্ট করছে তা-ই নয়, টেলিভিশনগুলোও আবার অনলাইন চালু করেছে। সেটিরও অনুমতি এখন পর্যন্ত নেই। সুতরাং সবকিছুকে একটি শৃঙ্খলার মধ্যে আনার জন্যই আমরা প্রক্রিয়া শুরু করেছি। আপনারা দেখেছেন, ইতিমধ্যেই অনেক শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ধীরে ধীরে এ ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।’ ব্যক্তিগত ইউটিউব চ্যানেল প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইউটিউব, ফেসবুকসহ সবার সঙ্গে আলোচনা করেছি যে তাদের মাধ্যম ব্যবহার করে যে ব্যবসা হচ্ছে বা বিজ্ঞাপন যাচ্ছে, সেগুলোর ওপর শুল্ক ধার্যের বিষয়টা আসবে, আমরা এনবিআরের সঙ্গেও কথা বলেছি। কেউ যদি বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে করে, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই দেশের আইন মেনেই তা করতে হবে।’