ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার ফুলপরী খাতুন ক্যাম্পাসে ফিরে নতুন হলে উঠেছেন। রোববার বাবার সঙ্গে পাবনার গ্রামের বাড়ি থেকে ক্যাম্পাসে আসেন তিনি। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলে নির্ধারিত কক্ষে তিনি উঠেছেন।
ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ছাত্রী ফুলপরী বলেন, ‘আমার মধ্যে ক্যাম্পাসের প্রথম দিনের অনুভূতি কাজ করছে। কোনো ভয়ভীতি কাজ করছে না। খুব ভালো লাগছে। কাল (সোমবার) থেকে ক্লাস করব। প্রশাসনের কাছে হল ও ক্যাম্পাসে সার্বিক নিরাপত্তার দাবি জানাচ্ছি।’
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের অ্যান্টি র্যাগিং ভিজিলেন্স কমিটি গঠন করেছে। রোববার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) এইচএম আলী হাসান। কমিটিতে প্রক্টর অধ্যাপক শাহাদাত হোসেন আজাদকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ সুষ্ঠু ও সুন্দর রাখার জন্য এই কমিটি করা হয়। দুই বছরমেয়াদি কমিটিকে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বলেছে কর্তৃপক্ষ।
গত ১২ ফেব্রুয়ারি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে নির্যাতনের শিকার হন ফুলপরী। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী ৪ মার্চ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হলে আসন বরাদ্দ পাওয়ার আবেদন করেছিলেন তিনি। এ বিষয়ে হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মিয়া মো. রাসিদুজ্জামান বলেন, ‘আবেদন করার পর সেদিনই একটি আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ফুলপরী ক্যাম্পাসে আসার পর চিফ মেডিকেল অফিসারকে বলা হয়েছে তার স্বাস্থ্যগত বিষয় পরীক্ষা করতে। হলে এলে যেন কোনো ধরনের সমস্যায় না পড়তে হয়, এ বিষয়টি দেখভাল করব। ওই কক্ষের অন্যদের ডেকে কথা বলেছি যেন ওর কোনো সমস্যা না হয়।’
ফুলপরীর বাবা আতাউর রহমান বলেন, প্রশাসন তাঁদের নিরাপত্তা দিয়েছে। ফুলপরী এখন থেকে হলেই থাকবে। ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের সভাপতি বখতিয়ার হাসান বলেন, ‘আমরা ওই ছাত্রীর খোঁজখবর রাখছি। ক্লাসে এসে নিরাপত্তাজনিত সমস্যায় যেন না পড়ে এবং কোনো ধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়। এ নিয়ে আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। এ ছাড়া গত মাসের ক্লাসে অংশ না নিলেও যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সে বিষয়টি দেখব।’
এদিকে ফুলপরীকে নির্যাতনের ঘটনায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকলেও হল কর্তৃপক্ষ ভিডিও ফুটেজ সরবরাহ করতে পারেনি। এই ব্যর্থতার বিষয়ে হল প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করতে একটি কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। অফিস আদেশে বলা হয়, গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে সংঘটিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে হল কর্তৃপক্ষ ভিডিও ফুটেজ সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয়েছে। এ বিষয়ে হল প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের চিহ্নিত করা ও কীভাবে ক্যামেরা সিস্টেম আরও কার্যকরভাবে পরিচালনা করা যায়, সে লক্ষ্যে কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন দিতে হবে। এদিকে পৃথক আরেকটি অফিস আদেশে আইসিটি সেলের অধীনে পরিচালিত সিসি ক্যামেরা সিস্টেমের পাসওয়ার্ড ও নিয়ন্ত্রণ কক্ষের চাবি জরুরি ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহাদৎ হোসেন আজাদের কাছে বুঝিয়ে দিতে বলা হয়েছে।
ইবিতে অডিও-ভিডিও ভাইরালের বিষয়ে তদন্ত কমিটি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশাসন, শিক্ষকসহ বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের নামে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অডিও ও ভিডিও ভাইরাল হওয়ার ঘটনায় নেপথ্যের লোকদের চিহ্নিত করতে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। রোববার অফিস আদেশে বলা হয়, অডিও, ভিডিও ধারণ করে ফেক আইডি খুলে তা বিভিন্ন ডিজিটাল মিডিয়া ও পত্রপত্রিকায় প্রচার করা হচ্ছে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালামের কণ্ঠসদৃশ বেশ কয়েকটি অডিও ফাঁস হয়। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে থানায় জিডি করা হয়। এক পর্যায়ে উপাচার্যের অপসারণের দাবিতে কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে আন্দোলন করেন চাকরিপ্রত্যাশী সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা। অডিও ফাঁসের ঘটনায় উপাচার্যের অবস্থান জানতে চেয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও প্রগতিশীল শিক্ষকদের সংগঠন শাপলা ফোরাম।