দেশে প্রতি বছর অনেক মানুষ সাপের কামড়ে মারা যায়। বিশেষ করে বন্যার সময় এ আশঙ্কা বাড়ে। এ সময় নানা রকম বিষধর সাপের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যায়। সাপের কামড়ে যেসব মানুষ মারা যায়, তাদের বেশির ভাগই কর্মক্ষম এবং ওই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। একটু সচেতন হলেই এ মৃত্যু আমরা অনায়াসেই প্রতিরোধ করতে পারি।
যেভাবে মানুষ সাপের কামড়ের শিকার হয়–
১. মাঠে মাছ ধরতে গিয়ে
২. বর্ষার সময় চারদিকে যখন পানি থাকে তখন সাপ শুকনো জায়গার জন্য বাসার ভেতরে আশ্রয় নেয়। সাধারণত খড়ি রাখার জায়গা, বিছানা, রান্নাঘর, আলনা, খড়ের গাদায় আশ্রয় নেয়। এসব জায়গায় অন্ধকারে/শব্দহীনভাবে গেলে সাপে কামড়ানোর ঝুঁকি বেশি থাকে।
৩. রাতের বেলা অন্ধকারে রাস্তায় চলার সময় (কারণ সাপ সাধারণত রাতের বেলা চলাচল বেশি করে)।
৪. মুরগি বা হাঁসের ঘরে সাপ ডিম বা মুরগির বাচ্চা খেতে এলে
৫. গরমের সময় বারান্দায় বা উঠানে ঘুমালে
সাপ কামড়ালে কী করবেন?
১. আতঙ্কিত হবেন না। কারণ সাধারণত সাপে কাটার পর মাত্র ২৫ শতাংশ মানুষের শরীরে বিষক্রিয়া হয়।
২. যে জায়গায় সাপ কামড় দিয়েছে, সে জায়গাটা নাড়ানো যাবে না। পাতলা গামছা বা শাড়ির কাটা অংশ দিয়ে হালকা করে বেঁধে দিতে হবে। আক্রান্ত স্থান নড়াচড়া করলে বিষ দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়বে।
৩. রোগীকে ঝাড়ফুঁক ও কবিরাজি করা, সাপে কাটার জায়গা ব্লেড দিয়ে কেটে ফেলা ইত্যাদি করা যাবে না।
৪. রোগীকে দ্রুত কাছের হাসপাতাল যেখানে সাপের বিষ নিষ্ক্রিয় করার ওষুধ দেওয়ার ব্যবস্থা আছে, সেখানে নিয়ে যেতে হবে।
৫. রোগীকে সাপে কামড়ানোর সময় থেকে ২৪ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। সাধারণত সাপে কামড়ানোর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শরীরে বিষক্রিয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে বিষক্রিয়ার কোনো লক্ষণ না হলে আর ভয়ের কোনো কারণ নেই।
ঝাড়ফুঁক করলে কি সাপে কামড়ানো রোগী ভালো হয়?
দেশের বেশির ভাগ সাপই অবিষাক্ত। এ ছাড়াও সাপে কাটা রোগীর মধ্যে মাত্র ২৫ শতাংশের শরীরে বিষক্রিয়া হয়। তাই যেসব রোগীর শরীরে সাপের বিষক্রিয়া হয় না, তাদের কবিরাজি চিকিৎসা দিলে সে সুস্থ হয়ে যাবে। কিন্তু যে রোগীর শরীরে বিষক্রিয়া হয়েছে, তাকে বিষ নিষ্ক্রিয় করার ওষুধ না দিলে মৃত্যু অবধারিত।
লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ, প্রাইম মেডিকেল কলেজ, রংপুর ও প্রতিষ্ঠাতা ডাক্তারখানা (জিপি সেন্টার)