সর্দি-কাশি হলেও ডেঙ্গু পরীক্ষা জরুরি

প্রতীকী ছবি

 

অনেকেই এই মৌসুমে ডেঙ্গুর পাশাপাশি ভাইরাল জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। এই দুই জ্বর সম্পূর্ণ আলাদা। প্রথম দিকে পার্থক্য করা কঠিন– কারণ, প্রাথমিক লক্ষণগুলো প্রায় একই রকম। জ্বর হলে এটা ভাইরাল জ্বর বা মৌসুমি ফ্লু ভেবে অপেক্ষা করাও ঠিক নয়। এমনকি সর্দি-কাশি থাকলেও ডেঙ্গু নয়, এটা ভাবা যুক্তিযুক্ত নয়। মনে রাখবেন, এবারের ডেঙ্গু জ্বরের প্যাটার্ন পাল্টেছে। এ বছর জ্বরের তীব্রতাতেও পরিবর্তন এসেছে, অনেকের জ্বর ১০০-১০১ পর্যন্ত হচ্ছে। আগে প্রচণ্ড শরীর ব্যথার কারণে এটাকে ব্রেক বোন ফিভার বলা হতো। এ বছর সেই প্যাটার্নেও এসেছে পরিবর্তন। আগে ৫-৬ দিনের দিন রোগীর কন্ডিশন খারাপ হতো। এখন ৩ দিনের মধ্যে এমনকি জ্বরের ১-২ দিনেও কেউ কেউ ক্রিটিক্যাল কন্ডিশনে চলে যাচ্ছে।

সতর্কতামূলক লক্ষণ: একটানা বমি, প্রচণ্ড পেট ব্যথা, অবসন্নতা বা অস্থিরতা অর্থাৎ আচরণগত পরিবর্তন, শরীরের অভ্যন্তরে রক্তক্ষরণ (চামড়ায় ফুসকুড়ি, দাঁতের মাড়ি, নাকে, বমির সঙ্গে, পায়খানা-প্রস্রাবে রক্ত যাওয়া) হাত-পা ফ্যাকাশে হয়ে ঠান্ডা বা ঘর্মাক্ত হওয়া, ৪-৬ ঘণ্টা ধরে প্রস্রাব না হওয়া সতর্কতার লক্ষণ। মনে রাখবেন, জ্বর ভালো হওয়ার পর ৩ থেকে ৪ দিন খুব ঝুঁকিপূর্ণ থাকে; যা ডেঙ্গু জ্বরের ক্রিটিক্যাল ফেইজ হিসেবে চিহ্নিত। তাই জ্বর নেমে গেলেই রোগী শঙ্কামুক্ত ভাবা ভুল।

করণীয়: প্যারাসিটামল ছাড়া কোনো জ্বর বা ব্যথার ওষুধ খেলে জটিলতা ও  বিপদের আশঙ্কা দেখা দেবে। প্রথম দিনেই ডাক্তার দেখাবে হবে এবং তিনটি টেস্ট অর্থাৎ সিবিসি, ডেঙ্গু এনএস ১, এসজিওটি করতে হবে। ডেঙ্গু এনএস ১ জ্বর শুরু হওয়ার ৩ দিন পর করলে লাভ নেই। সে ক্ষেত্রে সিবিসি, এসজিওটি, ডেঙ্গু অ্যান্টিবটি করতে হবে।

শকের লক্ষণ: তীব্র পেট ব্যথা, লো প্রেশারের সঙ্গে রোগীর হাত ও পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া। যদি অল্প প্রস্রাব হয়, হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। রোগীর শ্বাসকষ্ট হলে, পেট ফুলে গেলে, হঠাৎ করে গা ঝাঁকুনি দিয়ে খিঁচুনি হলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে। দিনে ৩ বারের বেশি বমি ও পাতলা পায়খানা হলে সোজা হাসপাতালে চলে যাবেন।

বাসায় করণীয়: রোগীকে প্রচুর পরিমাণে তরল যেমন– ডাবের পানি, স্যালাইনের পানি, স্যুপ, শরবত খাওয়াবেন। বমি, পাতলা পায়খানা হলে হাসপাতালে নিয়ে যাবেন।

বাসায় পালস অক্সিমিটার থাকলে অক্সিজেন স্যাচুরেশন চেক করবেন। শ্বাসকষ্ট হলে খারাপ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। কারও কারও ক্ষেত্রে প্লুরাল ইফিউশন অর্থাৎ ফুসফুসে, পেটে পানি চলে আসতে পারে।

লেখক: শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ও সভাপতি, বাংলাদেশ শিশু সংক্রামক ব্যাধি সমিতি