‘সংক্রমণ বাড়লে লকডাউনই একমাত্র পথ’

আনন্দও করব। আবার দোষারোপও। আমজনতার এমন মানসিকতায় করোনা ভাইরাসের প্রভাব বাড়ছে বলে মত দিয়েছেন ভারতে। বর্ষবরণে লাগামছাড়া হুল্লোড়ের ফলাফল হাতেকলমে দেখাচ্ছে দৈনিক সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী গ্রাফ। গাদাগাদি ভিড় সামলাতে গিয়ে রেহাই পাচ্ছেন না কেউ।

শুধুমাত্র শনিবারই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১৮ জন পুলিশকর্মী।

কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, এ পর্যন্ত ৫০ জন পুলিশকর্মী করোনা আক্রান্ত। একের পর এক পুলিশ করোনা আক্রান্ত হওয়ায় পুলিশ ব্যারাকে দুশ্চিন্তার স্রোত। হাউইয়ের বেগে ছুটছে আক্রান্তের গ্রাফ। তা ঠেকাতে আবারো লকডাউনই একমাত্র উপায় কি না এমন প্রশ্নও উঠছে। আমোদপ্রিয় জনতা হিল্লি দিল্লি ঘুরে এসে লকডাউনের সমালোচনা করছেন।

প্রাক্তন অ্যাসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনার অনিল জানা জানিয়েছেন, মানুষকে বললেও তারা শোনে না। সংক্রমণ বাড়তে বাড়তে যখন শেষ সীমায় পৌঁছয় তখন তাদের টনক নড়ে। এই মুহূর্তে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা ছাড়া উপায় নেই। রাত্রীকালীন বিধিনিষেধ তো বটেই, যে কোনো রকম জমায়েত বন্ধ করতে হবে।

এসএসকেএম হাসপাতালের সার্জন বিশিষ্ট চিকিৎসক দীপ্তেন্দ্র সরকার জানিয়েছেন, সরকারের কাছে নানা ব্যবস্থা থাকে। দৈনিক সংক্রমণ যখন পাঁচ শ’ মধ্যে, সেটা হচ্ছে প্রথম স্তর। এই সময় মানুষকে সাবধান করা হয়। ভ্যাকসিন নাও। মাস্ক পরো। এখন আমরা দ্বিতীয় স্তরে রয়েছি। এখানে একটা নির্দিষ্ট নীতি মানতে হবে। সংক্রমণ অনেকটাই বেড়েছে। সরকার এখন চাইছে ভিড়টা কমিয়ে আনতে। তার জন্য স্কুল-কলেজ বন্ধ করতে হবে। অত্যাবশ্যকীয় উপাদান ব্যতীত অন্যান্য দোকান বন্ধ রাখতে হবে। সিনেমা হল, প্রমোদ পার্কগুলো বন্ধ করা উচিত।

অফিসে উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। লোকাল ট্রেনে বাদুড়ঝোলা ভিড়টা আটকাতে হবে। তবেই সংক্রমণের চেনটা আটকানো যাবে। এরপর সরকার তাকিয়ে থাকবে সংক্রমণের গ্রাফের দিকে। ডা: সরকারের বক্তব্য, এখনই লকডাউন নয়। তবে যদি হাসপাতালের সমস্ত বেড ভরতি হয়ে যায়, অক্সিজেনে টান পড়ে, সেক্ষেত্রে তো আর কোনো বিকল্প নেই।

পার্ক স্ট্রিটে মানুষের আচরণে বিরক্ত লেখক সমাজসেবী বোলান গঙ্গোপাধ্যায়। সংক্রমণের এই বাড়াবাড়ি ঠেকাতে আরো কড়া হওয়া উচিত ছিল বলেই মনে করছেন তিনি।

তার কথায়, আজকের এই পরিস্থিতি নিমন্ত্রণ করে ডেকে এনেছে প্রশাসন আর আমজনতা। প্রশাসনের উচিত ছিল আরো কড়া হওয়া। সমস্ত রকম হুল্লোড় বন্ধ করে দেয়া।

কয়েকটা দিনের আনন্দের জন্য অর্থনীতিতে বিপর্যয় নামতে পারে বলে মনে করছেন তিনি। আবার লকডাউন হলে কী অবস্থা হবে শহর তথা গ্রামীণ অর্থনীতির?

বোলান গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন, অর্থনীতি ধাক্কা খেলে কিছু করার নেই। প্রাণ আগে না অর্থনীতি আগে সেটা ভেবে দেখতে হবে।