সাতকানিয়ার কাঞ্চনায় ভোটকেন্দ্রের বাইরে রাস্তার পাশ থেকে নৌকায় সিল মারা ব্যালট পেপারের ১টি বই উদ্ধার করা হয়েছে। শনিবার সকাল ১০টার দিকে কাঞ্চনায় কামাল উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে রাস্তার পাশে এক পথচারী ব্যালট পেপারের এ বইটি পান। রাস্তার পাশে খুঁড়িয়ে পাওয়া ব্যালট পেপার বইটিতে ০০০৪৭০১ থেকে ০০০৪৮০০ পর্যন্ত ব্যালট রয়েছে।
কেন্দ্রের বাইরে সিল মারা ব্যালট পেপার পাওয়ার পর পুরো এলাকায় তোলপাড় চলছে।
তবে এ ব্যাপরে নির্বাচন অফিস এবং পুলিশের কাছে কোনো তথ্য নাই। উল্লেখ্য, গত সোমবার (৭ ফেব্রুয়ারি) গোলাগুলি, কেন্দ্র দখল, জোরপূর্বক ব্যালটে সিল মারাসহ ব্যাপক সহিংসতার মধ্যে দিয়ে সাতকানিয়ার ১৬টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্যালট পেপারের কুড়িয়ে পাওয়া পথচারী জানান, সকালে আমি রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম। এ সময় রাস্তার পাশে ব্যালট পেপারের মতো খোলা একটি বই দেখতে পাই। তখন বইটি হাতে তুলে নেওয়ার পর দেখি নৌকায় সিল মারা ব্যালট পেপারের একটি বই। বিষয়টি আমি তাৎক্ষনিক স্থানীয় লোকজনকে দেখাই। পরে স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. ছালামের কাছে দিয়ে দিই।
কাঞ্চনা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোহাম্মদ ছালাম জানান, উদ্ধারকৃত নৌকায় সিল মারা ব্যালট পেপারের বইটি ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে মামলা দায়ের করা হবে।
তিনি আরো জানান, ভোট গ্রহণের দিন কামাল উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও উত্তর কাঞ্চনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থী রমজান আলীর কর্মী-সমর্থকরা গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে ভোটারদের তাড়িয়ে দিয়ে জোরপূর্বক ব্যালট পেপারে সিল মারে। উত্তর কাঞ্চনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকেও ব্যালট পেপারের ৪-৫টি বই ছিনিয়ে নেয়। পরবর্তীতে ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়। নৌকার প্রার্থী রমজান আলীর লোকজন তাড়াহুড়োর মধ্যে ভুলে হয়তো বইটি বাইরে ফেলে গেছে। নৌকার প্রার্থী রমজান আলীর লোকজন যে জোরপূর্বক কেন্দ্র দখল করে ব্যালট পেপারে সিল মেরেছে তার বড় প্রমাণ হলো রাস্তার পাশে কুড়িয়ে পাওয়া এ ব্যালট পেপার বই।
অন্যদিকে, রাস্তার পাশ থেকে নৌকায় সিল মারা ব্যালট পেপারের বই উদ্ধার সম্পর্কে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী রমজান আলী জানান, এগুলো ফালতু কথা। কোথাও কোনো ধরনের ব্যালট পেপারের বই পাওয়া যায়নি। এগুলো আমি বিশ্বাস করি না।
উত্তর কাঞ্চনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার সাতকানিয়া আদর্শ মহিলা কলেজের প্রভাষক তামজিদুল ইসলাম জানান, ভোটের দিন প্রথমে ৮টা ৪৫ মিনিটের দিকে কেন্দ্রে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এ সময় একদল লোক ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে জোরপূর্বক সিল মারার চেষ্টা করলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ভোট গ্রহণ বন্ধ করে দিই। আধঘণ্টার মতো বন্ধ থাকার পর রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তমতো ভোট গ্রহণ পুনরায় চালু করি। পরে দুপুর ১২টার দিকে কেন্দ্রে প্রচুর গোলাগুলি হয়। একপর্যায়ে একদল লোক কেন্দ্রের ভেতর থেকে ব্যালট পেপারের ২টি পুরো বই এবং সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারদের কাছে থাকা ব্যালট পেপারগুলো ছিনিয়ে নেয়। এরপর আমি রিটার্নিং অফিসারের সঙ্গে কথা বলে ভোট গ্রহণ স্থগিত করে দিই। পরে আমরা মালামাল নিয়ে চলে আসি। ওই কেন্দ্রে আর ভোট গ্রহণ হয়নি। অন্য কেন্দ্রের পাশে পাওয়া ব্যালট পেপারের বইটি আমার কেন্দ্র থেকে নেওয়া ব্যালট পেপার কি-না সেটা আমি বলতে পারব না। তবে আমার কেন্দ্র থেকে নেওয়া ব্যালট পেপার বইয়ের নম্বর ও ব্যালট নম্বর রিটার্নিং অফিসারের কাছে জমা দেওয়া কাগজপত্রের মধ্যে থাকবে।
এদিকে, কামাল উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, আমার কেন্দ্র থেকে কোনো ব্যালট পেপার ছিনতাই হয়নি।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু তালেব মন্ডল জানান, কাঞ্চনা ইউনিয়নের উত্তর কাঞ্চনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র দুস্কৃতকারীরা অতর্কিতভাবে হামলা করে মার্কিং সিল ও ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়েছিল। ফলে আমরা ওই কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করে দিই।
চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন অফিসার মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন জানান, ভোটকেন্দ্রের বাইরে রাস্তার পাশ থেকে ব্যালট পেপারের বই উদ্ধারের বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।
সাতকানিয়া থানার ওসি আবদুল জলিল জানান, ব্যালট পেপারের বই উদ্ধার সম্পর্কিত কোনো তথ্য এ মুহূর্তে আমার কাছে নেই।