ম্যাকিয়াভেলি (১৪৬৯-১৫২৭) :
পাঁচশ’ বছর আগে তার আবির্ভাব হয়েছিল ইতালির ফ্লোরেন্সে। মধ্যযুগ থেকে আধুনিক কালের সূচনাও হয়েছিল তার চিন্তা চেতনার মাধ্যমে। রাজতন্ত্রের বদলে আধুনিক জাতিরাষ্ট্র ও জাতীয়তাবাদের কথা সর্বপ্রথম বলেন তিনি।
তার পরামর্শে ঐক্যবদ্ধ হয় ইউরোপের বড় বড় জাতি। রেনেঁসাস ও রিফরমেশনের ভিত্তিতে আলোকায়নের সময় রাজনৈতিক আধুনিকায়নের নেতৃত্বে ছিলেন তিনি। যেমন, শিল্প-সংস্কৃতির ক্ষেত্রে ছিলেন রাফায়েল, মাইকেলেঞ্জেলো প্রমূখ। সবদিক বিবেচনা করে তাকে বলা হয়, আধুনিক রাষ্ট্র দর্শন ও চিন্তার জনক।
তিনি হলেন নিকোলো ম্যাকিয়াভেলি :
আধুনিক রাজনীতিতে কূট কৌশল, শক্তি-সাহস-নির্মমতা দিয়ে বিজয়ী হওয়ার মন্ত্র দিয়েছিলেন তিনি। যাতে নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য নৈতিক, অনৈতিক সবকিছু করার পরামর্শও ছিল শাসকদের প্রতি। দ্বিচারিতা ও আত্মস্বার্থে ভরা তার নীতিকে বলা হয় ‘ম্যাকিয়াভেলিবাদ’। যে মতবাদ প্রকাশিত হয়েছে তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দ্য প্রিন্স’-এ।
বইটিতে সদ্য সিংহাসনে আসীন যুবরাজদের উপদেশ দেওয়া হয়েছিল, ‘সিংহের মতো বলিষ্ঠ এবং শৃগালের মতো ধূর্ত হও। তোমার যারা সত্যিকারের শত্রু, তাদের তো বটেই, তাদের পরিবারের সদস্যদেরও নিশ্চিহ্ন করে দাও, যেন তুমি শাসন করতে পারো নির্ভাবনায়’। রাষ্ট্র পরিচালনা ও রাজনীতি বিষয়ে এমন নানা রকম আরও বহু পরামর্শ পাঁচশ’ বছর আগে রচিত বইটির পাতায় পাতায় ছড়িয়ে রয়েছে, যা আজও রাজনীতির অঙ্গনে সমান প্রাসঙ্গিক। রাজনীতিতে ম্যাকিয়াভেলি তত্ত্ব অনেক পুরনো হলেও দুর্বৃত্তায়ন প্রকৃতির রাজনীতিতে এটি এখনো অনেকে ব্যবহার করেন। তবে তারা বেশিরভাগই সমাজে ধিকৃত।
খন্ডিতাংশ রাজনীতিতে কৌশল থাকবেই। কিন্তু অপকৌশল কোনোভাবেই কাম্য নয়, হতে পারে না। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারের পথ যদি সংকুচিত হয় কিংবা হতে থাকে, তাহলে সমূহ বিপদাশঙ্কাও প্রকট হতে বাধ্য। রাজনীতি যদি নীতিরই রাজা হয়, তাহলে তৎসংশ্লিষ্ট অনেক কিছুই আমলে রাখা কিংবা নেওয়া অবশ্যই প্রয়োজন।
নীতি জলাঞ্জলি দিলে রাজনীতি থাকে না। আর যাই হোক এই প্রকৃতির লোকেরা রাজনীতির অঙ্গনে খুব বেশিদিন বিচরণ করতে পারেন না। এ সমাজে ম্যাকিয়াভেলিবাদ তত্ত্ব ধার করে যারা লেজ কাটা শিয়ালের ন্যায় ধূর্ত প্রকৃতির চরিত্রের রাজনীতি করেন। তারা আক্ষরিক অর্থে সফল হলেও জনগণের কাছে একেবারে নিন্দিত। নিজের কলংকিত বদনাম গোঁছানোর জন্য অন্যের গায়ে কালিমা লেপন করার মানসিকতা পোষণ করা রাজনীতি এখন ভোঁতা হয়ে গেছে।
টাকা কামানোর রাজনীতি অন্ধ করে দিয়েছে অনেককে। না হলে ক্যাসিনো খেলার মাধ্যমে রাজনীতির পদবিধারীরা অঢেল টাকার মালিক হয় কীভাবে? শেখ হাসিনার শুদ্ধি অভিযানও এখন স্তিমিত হয়ে পড়েছে। নৈপথ্যে এর কারণ না জানলে অনুমান করা যায়। ক্যাসিনো খেলায় রাজনীতিতে যাদেরকে মানুষ ক্লিন ইমেজের লোক বলেই জানেন, তাদের নামও ওঠে এসেছে। টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগে একশ্রেণির দলীয় লোকেরা টাকা কামানোর সূবর্ণ সময় হিসেবেই ধরে নিয়েছেন। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের সাথে সাধারণ জনগণের দূরত্ব অনেকটা বেড়েছে।
যারা টাকার পেছনে পাগলা ঘোড়ার ন্যায় দৌড়াচ্ছেন, তারা ভুলে গেছেন এক সময় আবারো ভোটের রাজনীতিতে জনগণের কাছেই যেতে হবে। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারীর নির্বাচন বা ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের ন্যায় নির্বাচন ভবিষ্যতেও ধারাবাহিতা থাকবে, এমনটা যারা ভাবেন তারা আহাম্মক। এই ভাবনা থেকে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে আওয়ামীলীগকে বেরিয়ে আসতে হবে। না হলে আওয়ামীলীগের রাজনীতি শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে ঠেকে তা সময়ই বলে দিবে।