লেবাননের রাজধানী বৈরুতে সম্ভাব্য ইসরায়েলি হামলায় হামাসের শীর্ষ নেতাদের নিহত হওয়ার ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। প্রায় তিন মাস ধরে গাজায় চলা যুদ্ধে প্রতিদিনই শত শত মানুষ মারা যাচ্ছেন। তথাপি ইসরায়েলের টার্গেট করে চালানো হত্যাকাণ্ড আঘাতের ঢেউ তুলছে; পুরোনো ক্ষতকেও চাঙ্গা করছে। সেই সঙ্গে সংঘাতের বিস্তারের আশঙ্কাকেও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
বৃহস্পতিবার আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে। এতে বলা হয়, মঙ্গলবার ইসরায়েলের হামলায় নিহতদের মধ্যে হামাসের জ্যেষ্ঠ কয়েকজন নেতা রয়েছেন। তাদের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সালেহ আল-আরৌরি। তিনি হামাসের সাবেক রাজনৈতিক শাখা ও কাসাম ব্রিগেডের সাবেক নেতা। গাজা উপত্যকার বাইরে থেকে তিনি রাজনৈতিক ও সামরিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতেন। সেই সঙ্গে হামাসের জন্য রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সমর্থন আদায়ে কাজ করতেন।
অধিকৃত পশ্চিম তীরের বাসিন্দা আল-আরৌরি হামাসের অন্যতম জনপ্রিয় নেতা। ইসরায়েলের ওই হামলায় হামাসের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার সামির ফিন্দি ও আজ্জাম আল আকরাও নিহত হন। এ হত্যাকাণ্ড ইসরায়েলের ঐতিহ্যবাহী স্টাইলে, অর্থাৎ দূর থেকে একটি লক্ষ্যবস্তুকে লক্ষ্যে পরিণত করে হামলা সংঘটিত হয়েছে। একইভাবে গাজার রাস্তায় ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে হত্যা করা হয়েছিল হামাসের অন্যতম শীর্ষ নেতা ও প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ ইয়াসিনকে।
হামাস নেতা আল-আরৌরি দীর্ঘকাল তুরস্ক, নেবাননসহ ফিলিস্তিনের বাইরে বিভিন্ন দেশে অবস্থান করছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি একটি নিজস্ব আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছিলেন। ইসরায়েল তাদের গোয়েন্দা তৎপরতার মাধ্যমে তাঁর সক্ষমতা ও পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতন ছিল। আরৌরিকে কোনো রাজনৈতিক কারণে হত্যা করা হয়ে থাকলে সেটা সম্ভবত হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ ও দক্ষিণ লেবাননে থাকা ইরানের অনেক রাজনৈতিক ও সামরিক প্রতিনিধির সংস্পর্শে যাওয়ার কারণে হয়েছে। হতে পারে প্রতিদিনই তিনি তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। এ অবস্থায় কাউকে দ্রুত তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হামাসের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়বে।
ইসরায়েলের অনেক জেনারেল, রাজনীতিক ও প্রভাবশালীদের অভিযোগ, বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে যেতে চান তাঁর নিজের স্বার্থে। কয়েক দিন আগে ইসরায়েলের সাবেক শান্তি আলোচক দানিয়েল লেভি সতর্ক করে বলেন, নেতানিয়াহু সরকার চায় না এ যুদ্ধ শেষ হোক। কারণ, শেষ হওয়ার পরদিন থেকে রাজনৈতিকভাবে বড় ধরনের চাপে পড়বেন তিনি। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত শুরু হবে।
গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নতুন বছরের শুরুতে বৈরুতে হামলা বিশ্বব্যাপী নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তাহলে ইসরায়েল কি যুদ্ধের বাঁক পরিবর্তন করল? এর আগে তারা গাজা থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সেনা সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ বৈরুতে অ্যাপার্টমেন্টে জোড়া ড্রোন হামলা ও হামাস নেতাদের হত্যার ঘটনা হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের লড়াইয়ের দিক পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। এ হামলা বৃহৎ যুদ্ধেরও আশঙ্কাকে উস্কে দিচ্ছে।
ইসরায়েলের সামরিক কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে গাজা থেকে সেনাদের একাংশকে সরিয়ে নেওয়া যায়। কারণ, উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে হামাস অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এতে হাজার হাজার রিজার্ভ সেনাকে তাদের বাড়িতে ফেরত পাঠানো যায়। সেনা প্রত্যাহারের ঘটনা এমন একসময় ঘটল, যখন ইসরায়েলের অভ্যন্তরে জনরোষের মুখে আছেন নেতানিয়াহু। তাঁর সরকার যুদ্ধে অর্থনৈতিক ক্ষতির পাশাপাশি ব্যাপক বিক্ষোভ ও রাজনৈতিক চাপের মুখে রয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের মাধ্যমে সেখানে যুদ্ধের শেষ হতে যাচ্ছে।