যুক্তরাষ্ট্র বছরে ১৫ হাজারের বেশি শরণার্থী নেবে: বাইডেন

শরণার্থী নীতিতে অবশেষে নিজের অবস্থানে ফিরে এলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রে বছরে ১৫ হাজারের বেশি শরণার্থী আশ্রয় দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

চাপের মুখে গত শুক্রবার বাইডেন নিজের দেওয়া প্রতিশ্রুতি থেকে সরে এসে যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার সংখ্যা কমিয়ে আনার ঘোষণা দিয়েছিলেন। পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেঁধে দেওয়া বছরে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার নিয়মই বাইডেন মেনে চলবেন বলে জানানো হয়। এ-সংক্রান্ত ঘোষণার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রেসিডেন্ট বাইডেন তাঁর অবস্থান পরিবর্তনের কথা জানান।

স্থানীয় সময় ১৭ এপ্রিল ডেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যের উইলমিংটন শহর ত্যাগের আগে বাইডেন বলেন, বছরে ১৫ হাজার শরণার্থী গ্রহণের সর্বোচ্চ সীমা বাতিল করা হবে।
আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলেও চলতি বছর ঠিক কতজন শরণার্থী গ্রহণ করা হবে, তা অবশ্য বাইডেন উল্লেখ করেননি।

ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকাকালে এক নির্দেশনায় যুক্তরাষ্ট্রে বছরে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার শরণার্থী গ্রহণের সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিলেন। নির্বাচনী প্রচারে বাইডেন এই সীমা উঠিয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন।

নির্বাচনে জিতে প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাইডেন দায়িত্ব নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রে সীমান্ত সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে। সীমান্ত দিয়ে নথিপত্রহীন লোকজনের প্রবাহ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের পক্ষে সীমান্ত ও শরণার্থী সমস্যা একসঙ্গে সামাল দেওয়া কঠিন হয়ে ওঠে।

যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী গ্রহণের বার্ষিক সর্বোচ্চ সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়াটা বাইডেনের জন্য জটিল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় অনেকটা বাধ্য হয়ে শুক্রবার বাইডেন হঠাৎ ঘোষণা দেন, চলতি বছরেও যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী গ্রহণ ১৫ হাজারে সীমাবদ্ধ থাকবে। তাঁর এ ঘোষণায় তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

মধ্যপন্থী ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের সময়ের নীতি বহাল রাখার পক্ষে। তাঁরা বলছেন, বর্তমান বাস্তবতায় অধিক শরণার্থী গ্রহণ করা হলে তা অভিবাসনব্যবস্থার ওপর চাপ তৈরি করবে। অন্যদিকে, ডেমোক্রেটিক পার্টির উদারনৈতিক পক্ষ বছরে শরণার্থী গ্রহণের সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজারে বৃদ্ধি করার দাবি জানিয়ে আসছে।

শুক্রবার প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ঘোষণার পর ডেমোক্রেটিক পার্টির উদারনৈতিক পক্ষ দ্রুত প্রতিক্রিয়া দেখায়। কংগ্রেসওম্যান ইলহান ওমর ও আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ বিবৃতি দিয়ে এ বিষয়ে তাঁদের হতাশা প্রকাশ করেন। তাঁরা বলেন, এমন সিদ্ধান্ত প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের শামিল। নির্বাচনের আগে বাইডেনের দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী শরণার্থী নেওয়ার সংখ্যা না বাড়ালে তা অভিবাসীবান্ধব নাগরিক ও নাগরিক সংগঠনগুলোর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা হবে। এমন সমালোচনার মুখে বাইডেন তাঁর সিদ্ধান্তে বদল আনলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে অভিবাসীপ্রবাহ সামাল দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অধিক শরণার্থী গ্রহণের চাপ অভিবাসন বিভাগ গ্রহণ করতে পারবে না বলে গতকাল শনিবার উল্লেখ করেন বাইডেন। তিনি বলেন, তাঁরা একাধিক কাজ একসঙ্গে করতে পারবেন না। তবে আগের প্রশাসনের সময়ে গ্রহণ করা সংখ্যার চেয়ে বেশি শরণার্থী গ্রহণ করা হবে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান।

হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি জেন সাকিও জানিয়েছেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন বিষয়টি নিয়ে তাঁর উপদেষ্টাদের সঙ্গে পরামর্শ করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের বর্ষ সেপ্টেম্বর মাসে শেষ হয়। এ বছরের বাকি সময়ের মধ্যে প্রত্যাশা অনুযায়ী ৬২ হাজার ৫০০ জন শরণার্থী গ্রহণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব না-ও হতে পারে।

শরণার্থী গ্রহণের সর্বোচ্চ সংখ্যা বৃদ্ধির সিদ্ধান্তে নেওয়ায় প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কংগ্রেসওম্যান আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কর্টেজ। এক টুইটবার্তায় তিনি বলেছেন, এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আমেরিকার প্রগতিশীল আন্দোলনের ঐক্যবদ্ধ শক্তির প্রতিফলন ঘটেছে।

সারা বিশ্বে প্রতিবছর অনেক মানুষ নানা কারণে স্বদেশ থেকে বিতাড়িত হয়। এসব লোক কখনো রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে, কখনো ক্ষমতাসীনদের দমন-পীড়নে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। সাম্প্রতিক সময়ে সারা বিশ্বে উদ্বাস্তুর সংখ্যা বেড়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র তার মানবিক কর্মসূচির আওতায় বছরের পর বছর শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে আসছিল। সারা বিশ্বের বিভিন্ন জায়গা থেকে বিতাড়িত মানুষের আশ্রয়ের অন্যতম জায়গা হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময় যুক্তরাষ্ট্র এই অবস্থান থেকে সরে আসে। তিনি বছরে ১৫ হাজার শরণার্থী গ্রহণের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দেন। তাঁর এই সিদ্ধান্তের জেরে যুক্তরাষ্ট্রের উদারনৈতিক রাজনৈতিক পক্ষ ও নাগরিক সংগঠনগুলো আন্দোলনে নামে। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সর্বশেষ সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে উদারনৈতিক পক্ষগুলোর অবস্থানের জয় হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।