ভর্তি পরীক্ষার পদ্ধতি নিয়ে জটিলতায় শিক্ষার্থীরা

উচ্চশিক্ষায় ভর্তি পরীক্ষার সিলেবাস নিয়ে জটিলতায় পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। ২০২১ সালের এইচএসসি উত্তীর্ণরা কভিডের কারণে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পড়ালেখা করলেও কোনো কোনো বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণ সিলেবাসে আবার কেউ কেউ সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নিতে চায়। ফলে প্রস্তুতিতে তাল মেলাতে পারছেন না শিক্ষার্থীরা। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কলেজের শিক্ষার্থীরা

করোনার কারণে ২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। নৈর্বাচনিক তিনটি বিষয়ের মোট ছয়টি পত্রে তাঁরা পরীক্ষা দেন। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করতে বাধ্য হয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়, কিন্তু এখন বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল-ডেন্টাল কলেজে পূর্ণ সিলেবাসে আগ্রহ প্রকাশ করায় এসব শিক্ষার্থী কঠিন সংকটে পড়েছেন।kalerkanthoতবে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ভর্তি পরীক্ষা নিতে একাধিকবার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠান শেষে তিনি বলেন, ‘যেখানে আমরা সিলেবাস পুনর্বিন্যাস করে এইচএসসি পরীক্ষা নিয়েছি, সেখানে ভর্তি পরীক্ষাটাও পুনর্বিন্যাসকৃত সিলেবাসে হওয়া উচিত, সেটাই যৌক্তিক। এ ব্যাপারে আমি এরই মধ্যে স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব ও বিএমডিসির প্রধানের সঙ্গে আলাপ করেছি। তাঁরা আমাকে জানিয়েছিলেন, বিষয়টি দেখবেন। আমি এ ব্যাপারে আবারও কথা বলব। ’

শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন গুচ্ছের ৩১ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে ভর্তি পরীক্ষা নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে মেডিক্যাল ও ডেন্টালের ভর্তি পরীক্ষা পুরো সিলেবাসেই নিতে চায় স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর। আর বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এখনো তাদের সিদ্ধান্ত জানায়নি। তবে তারাও পূর্ণ সিলেবাসে পরীক্ষা নিতে চায়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমাদের ভর্তি পরীক্ষার টার্গেট গ্রুপ উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী। তাই এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংশ্লিষ্ট ইউনিটপ্রধান, অর্থাৎ ডিনরা সিদ্ধান্ত নেবেন। ’

গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্যতম অংশীদার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. ইমদাদুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘সংক্ষিপ্ত সিলেবাস এবং পূর্ণ সিলেবাস—দুটিরই পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি রয়েছে। শিগগিরই গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে শিক্ষার্থীদের যেটায় ভালো হয়, আমরা সেটাই করব। ’

এ বছর মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষা আগামী ১ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এইচএসসি বা সমমান সিলেবাস অনুযায়ী এ বছরের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে, কিন্তু সংক্ষিপ্ত বা পূর্ণ সিলেবাসের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়নি। ফলে ভর্তীচ্ছু শিক্ষার্থীরা চরম বিভ্রান্তি ও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন।

স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. আবু ইউসুফ ফকির কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা এ বছরের ভর্তি পরীক্ষা পূর্ণ সিলেবাসে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ এটা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা। এখানে পাস-ফেলের ব্যাপার নেই। যে ভালো করবে, সেই টিকবে। ২০২০ সালে কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষাই হয়নি, তার পরও আমরা পূর্ণ সিলেবাসেই ভর্তি পরীক্ষা নিয়েছিলাম। ’

মেডিক্যালে ভর্তীচ্ছু আরিফ হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এইচএসসি ও সমমানের সিলেবাস মানে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসকেই বোঝায়। তাই আমরা যে সিলেবাসে পরীক্ষা দিয়েছি, সেই সিলেবাসেই প্রস্তুতি নিয়েছি। কিন্তু এখনো স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা না আসায় আমরা প্রচণ্ড ভয়ের মধ্যে আছি। আর এখন যদি পূর্ণ সিলেবাসেই ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত আসে, তাহলে এত অল্প সময়ে আমাদের প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব নয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমরা বাদ পড়ব। ’

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মেডিক্যাল, ইঞ্জিনিয়ারিং, ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় সিলেবাসের মধ্যেও সমন্বয় থাকা উচিত। কারণ প্রত্যেক শিক্ষার্থীই একাধিক ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নেয়। তাই বেশির ভাগ বিশ্ববিদ্যালয় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নিলেও মেডিক্যালে যদি পূর্ণ সিলেবাসে নেওয়া হয় তাহলে প্রস্তুতি বিঘ্ন ঘটবে। এ ছাড়া সরকারি মেডিক্যালে চার হাজার ৩৫০টি আসনের বিপরীতে এক লাখের অধিক পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করে থাকে। সেখানে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক শিক্ষার্থী দ্বিতীয়বার (পূর্ববর্তী এইচএসসি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা) অংশগ্রহণ করে থাকে। তাই পূর্ণ সিলেবাসে এই পরীক্ষা হলে দ্বিতীয়বার ও প্রথমবারের শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য তৈরি হবে। কারণ যারা দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দিচ্ছে তারা পূর্ণ সিলেবাসে দীর্ঘদিন প্রস্তুতি নেওয়ার সুযোগ পেয়েছে। এতে ২০২১ সালের এইচএসসিতে উত্তীর্ণ প্রকৃত মেধাবীদের বাদ পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক মুহাম্মদ আলমগীর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি দিয়েছি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। তবে আমি মনে করি, যে সিলেবাসের ওপর এইচএসসি পরীক্ষা হয়েছে সেই সিলেবাসেই ভর্তি পরীক্ষা হওয়া উচিত। ’