বানেশ্বরে গাড়ি গাড়ি আম, শুধু নেই ক্রেতা

রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের হাট বানেশ্বরে। এখানে প্রতিদিন শত কোটি টাকার আমের বাণিজ্য হয়ে থাকে। তবে সম্প্রতি আমচাষিদের চোখেমুখে দেখা গেছে হতাশা। তাদের ভাষ্য, ‘হাটে গাড়ি গাড়ি আম আছে, কিন্তু ক্রেতা নেই।’

সকাল ৮টা থেকেই রাজশাহীর আনাচে-কানাচে থেকে আম নিয়ে বানেশ্বর বাজারে আসতে শুরু করেন চাষিরা। এর আগে ভোর থেকে বাগানে আম পেড়ে ক্যারেট ভর্তি করেন। পরে একটি ভ্যান ভাড়া করে ছোটেন রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের বাজার বানেশ্বরে।

পবা উপজেলার হরিয়ান থেকে বানেশ্বর কলেজ মাঠে আমের হাটে আম বিক্রি করতে এসেছেন আবুল কালাম নামের এক চাষি। আক্ষেপের স্বরে তিনি বললেন, ‘আম এনেছি ৫৫ ক্যারেট। দুপুর একটার দিকে এসেছি। ব্যাপারিরা কেউ নাই। এখন পর্যন্ত একটা লোকও জিজ্ঞাসা করল না আমের দাম কত? হাটে সব আমওয়ালাতেই ভর্তি। আমার মতন অনেকেই এমন বসে আছেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা।’

আম নিয়ে অপেক্ষমান মো. শাহজাহান আলী তার (আবুল কালাম) কথায় সাই দিয়ে জানান আরও বিভিন্ন অভিযোগ। তিনি বলেন, ‘বাজারে ক্রেতা নাই। এই সুযোগে ৪৮-৫২ কেজিতে মণ নিচ্ছে ব্যাপারিরা। সার, কীটনাশকের দাম অনেক। আবার ধরেন প্যাট-পাটাল ৫০০ টাকা, লেবারে লাগে ৬০০, দু’তিন জন দুপুরবেলা ভাত খেলে আবার খরচ হয় ৫০০ টাকা। আবার এখানকার স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আম নেয়ার পর টাকা বাকি রেখে দেয়, টাকা দিতে চাই না।’

jagonews24

তিনি বলেন, ‘আমচাষে যে টাকা খরচ করছি, সে টাকা পাচ্ছি না। এবার আমের দাম একেবারেই কম। এমন অবস্থা ক্রেতাদেরকে ধরে ধরে নিয়ে এসে আম দেখাতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে আমে বিশাল লস এবার।’

কাটাখালী এলাকার সুজন আলী নামের স্থানীয় এক আমচাষি বলেন, ‘আমাদের এখানে ক্রেতা অনেক কম। সাধারণ ক্রেতা নাই বললেই চলে। ঢাকাসহ অন্যান্য জেলার যেসব বাইরের ব্যাপারিরা আছেন তারা আবার স্থানীয় ব্যাপারিদের সঙ্গে করে নিয়ে আসেন। হাটে যখন দেখে আম অনেক বেশি তখন তারা দাম দিতে চাই না। আবার ৫২ কেজি আমে মণ হিসেব করে। এতে ১২ কেজিই পুরাই লস, এটা আমাদের চাষিদের জন্য বিশাল সমস্যা।’

বানেশ্বর বাজারের আবু সুফিয়ান নামের এক ব্যাপারি বলেন, ‘বাইরের পার্টিরা ৪৫ কেজিতে মণ নেয়। কম দিলে নিতে চাই না। আবার ৪৫ কেজি আম পাঠালে সেটা পেকে গেলে ওজন কমে ৪৩ কেজি কমে যায়। তখন তারা আবার আপত্তি জানায়। তাই আমাদেরও এখানে চাষিদের কাছে থেকে মণপ্রতি বেশি নিতে হয়। তবে ৪৮ থেকে ৫২ কেজিতে মণ ধরার বিষয়টি সত্য নয়।’