প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানির পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মার সঙ্গে আজ সোমবার সচিবালয়ে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় এ কথা জানান প্রতিমন্ত্রী।
হাইকমিশনারকে স্বাগত জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশ ও ভারতের একসঙ্গে কাজ করার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে আমরা ৯ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করতে চাই। নেপাল ও ভুটান থেকে জলবিদ্যুৎ আমদানির প্রক্রিয়া অনেক অগ্রসর হয়েছে। নেপাল থেকে ৪০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির চুক্তি আগামী মাসে স্বাক্ষর হতে পারে। জিএমআরের মাধ্যমে ৫০০ মেগাওয়াট জলবিদ্যুৎ আমদানির বিষয়টি প্রায় চূড়ান্ত। নবায়ণযোগ্য জ্বালানি হতে বিদ্যুৎ আমদানির বিষয়ও এগুচ্ছে।’
নসরুল হামিদ আরও বলেন, ‘মেঘালয়, ত্রিপুরা বা আসাম থেকে বিদ্যুৎ আমদানি ও রপ্তানির বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এইচ-এনার্জির মাধ্যমে এলএনজি/গ্যাস আমদানির প্রক্রিয়া প্রায় চূড়ান্ত। আমরা ভারতসহ প্রতিবেশি দেশগুলোর সঙ্গে কানেকটিভিটি বাড়াতে চাই। এ ক্ষেত্রে ভারতের সহযোগিতা প্রয়োজন। নেপাল থেকে বাংলাদেশে ডেডিকেটেড লাইন থাকলে পাওয়ার ট্রেড গতি পাবে। এতে ভারতও লাভবান হবে।’
সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়াতে প্রতিমাসে উভয়পক্ষের সংশ্লিষ্টদের সভা করা অপরিহার্য জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বায়ু ফুয়েল নিয়েও আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি। এলপিজির চাহিদা বাড়ছে এসব খাতে বাংলাদেশের বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা ভারতে কীভাবে কাজ করতে পারে এ বিষয়টিও সক্রিয় বিবেচনা করা যেতে পারে।’
ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাইকমিশনার বলেন, ‘বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সহযোগিতা বাড়ছে। নেপাল থেকে বাংলাদেশে জলবিদ্যুৎ আমদানি চলমান। ভারতও নেপাল থেকে প্রায় ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করে।’
এ সময় হাই ভোল্টেজ সঞ্চালন লাইন, নবায়ণযোগ্য জ্বালনি, বিদ্যুৎ আমদানি-রপ্তানি, আর-এলএনজি, জ্বালানি সক্ষমতা বৃদ্ধি, জ্বালানি দক্ষতা, ভবিষ্যৎ আঞ্চলিক কানেকটিভিটি ইত্যাদি নিয়ে প্রাণবন্ত আলোচনা হয়।
এর আগে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে তার দপ্তরে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন মন্ত্রী। এ সময় তাঁরা পারস্পারিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন।
চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের সহযোগিতা উত্তরোত্তর বাড়ছে। সহযোগিতার ক্ষেত্র বাড়ানের জন্য একসঙ্গে বসা জরুরি ছিল। আগামী পাঁচ বছরে বাংলাদেশ আরও সমৃদ্ধি, শক্তিশালী ও উন্নত হবে।
এ সময় চাইনিজ অর্থায়নে প্রকল্পসমূহ, লিথিয়াম ব্যাটারী ফ্যাক্টরী স্থাপন, সেমি কন্ডাক্টর ফ্যাক্টরী স্থাপন, ইলেক্ট্রিক ভেহিক্যাল, ব্যাটারী স্টোরেজ সিস্টেম, স্মার্ট মিটার, সোলার বিদ্যুৎ প্রকল্প, বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প, বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ, গ্যাস উত্তোলন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়।
প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘চীন, বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের প্রসারে চাইনিজ কোম্পানিগুলো গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। আমরা চীনকে আমাদের পাশে আরও বড় আকারে দেখতে চাই। আগামী পাঁচ বছরে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ৩০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।’ এ সময় তিনি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের বিনিয়োগের খাতগুলো উল্লেখ করে বলেন, বিনিয়োগের ক্ষেত্র বাড়াতে একটি বিশেষায়িত দল গঠণ করা যেতে পারে।