পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম

 

পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম (পিসিওএস) অনেক নারীর কাছে পরিচিত রোগ। অনিয়মিত মাসিক ও বন্ধ্যাত্বের অন্যতম কারণ এটি। এই রোগে ওভারিতে চারপাশে মালার মতো ছোট ছোট সিস্ট হয়। সাধারণত ১৫ থেকে ৪৫ বছরের নারীদের মধ্যে এমন হয়।

কেন হয়: এই রোগ নারীদের ওভারি বা ডিম্বাশয় ও হরমোন উৎপাদন মাত্রার ওপর প্রভাব ফেলে। যখন মেয়েলি হরমোন থেকে পুরুষালি হরমোনের উৎপাদন বেশি হয়, তখন ডিম্বগুলো সম্পূর্ণরূপে পরিপক্ব হয় না এবং সঠিক সময়ে পিরিয়ডের মাধ্যমে বের না হয়ে সিস্ট আকারে ওভারিতে জমা হয়। অনেক সিস্ট জমা হয়ে ওভারির আকার বড় করে ফেলে এবং পলিসিস্টিক ওভারির সৃষ্টি করে। এরপর পিরিয়ড অনিয়মিত হয়ে যায়। এতে জরায়ুর ভেতরের পর্দাও মোটা হয়ে যায়। কখনও কখনও ওভারির ভেতরে অস্বাভাবিক কোষ বৃদ্ধি হয়।

কারণ: হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, অর্থাৎ মেয়েদের শরীরে অতিরিক্ত অ্যান্ড্রোজেন তৈরি হওয়াকে এ রোগের প্রধান কারণ ভাবা হয়। বংশগত কারণে, পারিবারিকভাবে ডায়াবেটিসের ইতিহাস থাকলে এই রোগ হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ৭০ শতাংশ পিসিওএস আক্রান্ত নারীর আগে ডায়াবেটিস বা কোষে ইনসুলিনের গ্রহণযোগ্যতা কম ছিল। খাবারে অতিরিক্ত রাসায়নিকের প্রয়োগ, প্যাকেট বা টিনজাত খাবার, অতিরিক্ত চিনি এবং চর্বিযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড, কোমল পানীয়, অপর্যাপ্ত বা অনিয়ন্ত্রিত ঘুম, শারীরিক পরিশ্রম কম, স্ট্রেস ও মানসিক চাপ থেকেও এ রোগ হতে পারে।

ওভারিতে লক্ষণ: পিসিওএসের লক্ষণ বাইরে থেকে অনেক সময় বোঝা যায় না। সাধারণত বয়ঃসন্ধির কিছু পর থেকে লক্ষণ প্রকাশ পায়। তবে অনেকের ক্ষেত্রে এর প্রকাশ প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় হয়। অনেকেই ছোট ছোট লক্ষণকে গুরুত্ব দেন না। যখন গর্ভধারণে সমস্যা দেখা দেয়, তখন ডাক্তারের কাছে গিয়ে জানতে পারেন। লক্ষণগুলো হলো– হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়া এবং বাড়তেই থাকা, শরীরের ওপরের অংশ ও পেটের ওজন বাড়তে থাকা, অনিয়মিত পিরিয়ড ও নানা সমস্যা, অলিগোমেনোরিয়া (বছরে ৯ বারের কম পিরিয়ড), অ্যামেনোরিয়া ইত্যাদি। পুরুষের মতো মুখে, বুকে, পিঠে বা অন্যান্য জায়গায় অবাঞ্ছিত লোম দেখা দেয়। তৈলাক্ত ত্বক ও ব্রণের আধিক্য। ঘাড়ে কালো ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায়। স্কাল্পের কোথাও কোথাও চুল উঠে গিয়ে টাক পড়ে।

প্রতিকার: অল্প বয়সে মাসিকের সমস্যা, ওজন বৃদ্ধি, বন্ধ্যত্ব ইত্যাদি পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

লেখক: অধ্যাপক (সিসি), গাইনি অ্যান্ড অবস, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল; প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ এবং সার্জন আলোক হেলথকেয়ার অ্যান্ড হাসপাতাল লিমিটেড, মিরপুর-১০, ঢাকা।