নিজস্ব প্রতিবেদক :
কেউ কেউ আমার পদত্যাগ দাবি করছেন। পদত্যাগ করা এক সেকেন্ডের বিষয়, তাতে যদি পেঁয়াজের দাম কমে। এই মন্ত্রিত্ব কাজ করার জন্য।’ বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি এবং চড়া দামের মধ্যে কথাগুলো বললেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি রোধে ব্যবসায়ীদের করণীয় নিয়ে এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটি রাজধানীর একটি হোটেলে আজ মঙ্গলবার এই সভার আয়োজন করে। এতে বাণিজ্যমন্ত্রী ছাড়াও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও আওয়ামী উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য কাজী আকরাম উদ্দীন আহমদ, শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্যসচিব আবদুছ সাত্তারসহ এফবিসিসিআইয়ের কয়েকজন পরিচালক, বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসায়ী ও দোকানমালিক সমিতির নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে অল্প সময়ের মধ্যে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির কারণ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, বছরের শেষ দিকে প্রতি মাসে ১ লাখ টন পেঁয়াজ আসে। ভারত বন্ধ করে দেওয়ায় এসেছে ২৫ হাজার টন করে। মিয়ানমার থেকে পেঁয়াজ আসত। সেখানে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দাম বেড়ে গেছে। এই অঞ্চলের সব দেশেই পেঁয়াজের দাম চড়া। পেঁয়াজের বাজার সামাল দিতে নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, ‘অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করার পর তারা উদ্যোগী হয়। প্রধানমন্ত্রী নিজে এস আলমের প্রধানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন।’
কোনো মুনাফা ছাড়া পেঁয়াজ আমদানি করে দেওয়ায় সিটি, মেঘনা ও এস আলমকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, তাদের পেঁয়াজের খরচ পড়েছে কেজিপ্রতি সাড়ে ৪২ টাকা। এ পেঁয়াজ টিসিবিকে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এর বাইরে অনেকে আমদানি করছে, সেটা তো চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, এই মুনাফালোভীদের মূল্যবোধ সংকটের সময়ও জাগ্রত হয় না। আজকে বক্তব্য দেওয়ার সময় ১৯৬৬ সাল থেকে রাজনীতি ও ১৯৭২ সাল থেকে ব্যবসা করার কথা উল্লেখ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
আগামী তিন বছরে পেঁয়াজে স্বাবলম্বী হওয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে। এবার নতুন পেঁয়াজ উঠলে ভারতীয় পেঁয়াজ আমি বন্ধ করে দেব।’ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ দোকানমালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজ বিক্রি কমে গেছে। মানুষের মধ্যে ঝোঁক নেই। কারণ সবাই দেশকে ভালোবাসে। তিনি বলেন, ৩০-৩৫ টাকার পেঁয়াজ ২৫০ টাকা হয়েছে। আশপাশের দেশেও দাম ১২০ টাকার কাছাকাছি। তবে দেশে ২৫০ টাকা হওয়ার কারণ নেই।
আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক উপকমিটির সদস্যসচিব আবদুছ সাত্তার বলেন, এক শ্রেণির মুনাফাখোরের উন্নয়ন দেখে মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাদের লক্ষ্য কীভাবে সরকারকে ঠেকানো যায়। বাজার খারাপ করে তারা ক্ষমতায় আসতে পারবে না। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসায়ীরা বক্তব্য দেন। পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী গোলাম মাওলা বলেন, ‘কেউ যদি সরকারকে বিপাকে ফেলতে দামায় বাড়ায়, তাহলে ব্যবস্থা নিন। আমরা আন্দোলন করব না। তবে যৌক্তিক হতে হবে।’
শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সেলিম বলেন, এবার মৌসুমের শেষ দিকে বৃষ্টির কারণে পেঁয়াজের ক্ষতি হয়েছিল। ফলে কৃষকেরা ঘরে মাচা করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে পারেনি। তিনি বলেন, গুদামে পেঁয়াজ রাখা যায় না। তিন দিন পরই পচন ধরে।