১৯৪৮ এ ভাষা আন্দোলনের উত্তাপ কিছুটা লেগেছিল ঝিনাইদহে। ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের পরিপূর্ণ ঢেউ লাগে এ জেলায়। উত্তাল হয় ঝিনাইদহ। সেই আন্দোলনের এক অকুতোভয় সৈনিক নন্দ দুলাল সাহা। ৮৮ বছরেও তিনি এখনো অবিচল। কিন্তু দুঃখ একটাই কেউ খোঁজ রাখে না তার। রাষ্ট্রীয়ভাবে ভাসা সৈনিকদের সম্মান দেয়া প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, বয়স ৮৮ হলেও এখনো কোনো সাহায্য ছাড়াই একাই প্রিয় শহরে চলাচল করেন তিনি। ৮ বছর আগে স্ত্রী মারা যাওয়ায় সম্পূর্ণ একাই কষ্টের জীবন-যাপন করছেন ঝিনাইদহের পার্ক পাড়ায়। ৫ মেয়ে ও ২ ছেলের জনক ভাষা সৈনিক নন্দ দুলাল সাহা। সবাই যে যার মতো বিভিন্ন জেলায় থাকায় এখন একেবারেই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছেন। এক বাড়িতে একাই থাকেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সময়ও তিনি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তার দুঃখ কেউই তার খোঁজ রাখে না।
ভাষা সৈনিক নন্দ দুলাল সাহা বলেন, তিনি ছবিঘর সিনেমা হলের পাশে গোপনে পোস্টার লিখছিলেন। এক পুলিশ টের পেয়ে পা দিয়ে পোস্টারগুলো মাড়িয়ে দেয়। পুলিশকে ঘুষি মেরে পালিয়ে যান। এ জন্য তাকে অনেক দিন পালিয়ে থাকতে হয়েছিল। তিনি বলেন, জাতীয়ভাবে তিনি কোনো স্বীকৃতি পাননি। তবে এ নিয়ে তার কোনো ক্ষোভ নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় তার একটি হাতের পাতায় গুলিও লাগে। কিন্তু তিনি কখনো মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিও পাননি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে কেউই তার খোঁজ নেন না।
এলাকাবাসীরা জানান, আসলেই কষ্টে আছেন তিনি। একাকীত্ব তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন আছে বলে মনে করেন তারা।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া জেরিন জানান, ভাষা সৈনিক নন্দ দুলাল সাহার জন্য যা যা করা যায় সবকিছুই করা হবে। আরও বেশি কিছু করার চিন্তা ভাবনাও করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন সেমিনার, অনুষ্ঠানে তাকে অতিথি হিসাবে রাখার পরিকল্পনা চলছে। যেনো তার সময়টা ভালো কাটে। আর নতুন প্রজন্ম যেনো আমাদের ভাষার গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস জানতে পারে। উনার জন্য বয়স্ক ভাতারও ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।