এনবিআরের সার্ভার সমস্যা, চরম দুর্ভোগের চট্টগ্রাম বন্দরের স্টেকহোল্ডাররা

দেশের স্থল ও সমুদ্র বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালনায় এনবিআরের অটোমেশনে সার্ভার সমস্যা দূর হয়নি। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরকে ঘিরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে কাঙ্ক্ষিত সুবিধা থেকে দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত বন্দর ব্যবহারকারী সংস্থাসমূহ।

সময়ক্ষেপণ ও সার্ভারের জটিলতা চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবসায়ী ও রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের জন্যও আর্থিক ক্ষতির কারণ বলে সংশ্লিষ্ট সবার অভিমত। সরাসরি যে ক্ষতির কথা বন্দর ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন, সেটি হলো সার্ভার সমস্যা। গত প্রায় এক যুগ ধরে চলছে। এখন এটি আরো প্রকট হয়েছে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্যের শুল্কায়নে ও রাজস্ব আদায়ে অনেক সময় লাগছে।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের কমিশনার ফখরুল আলম ইত্তেফাককে বলেন, চলতি বছরের আসন্ন জুন-জুলাই মাসেই এনবিআরের অটোমেশন প্রক্রিয়ায় সার্ভারের শক্তিবৃদ্ধিতে নতুন যন্ত্রপাতি বসানো হবে।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডারস অ্যাসোসিয়েশনের (বাফা) চট্টগ্রাম বন্দর বিষয়ক পরিচালক এবং বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন ইত্তেফাককে বলেন, ‘অনেক বছর ধরেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পক্ষ থেকে অটোমেশন তথা সার্ভার সমস্যা সমাধানের আশ্বাস প্রদান করা হচ্ছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এই আশ্বাসের কোনো বাস্তবায়ন নেই। ফলে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী সংস্থা, সংগঠন বা স্টেকহোল্ডাররা বহুমুখী জটিলতার মুখোমুখি হচ্ছেন। এ কারণে যদি ক্ষতির কথা বলা হয়, তার মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষতি তো আছেই সেই সঙ্গে বলা যাবে সার্ভারের জটিলতায় সবার বিস্তর সময় নষ্ট হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম বন্দর কেন্দ্রিক বাংলাদেশ ক্লিয়ারিং ফরোয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের জয়েন্ট সেক্রেটারি কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু ইত্তেফাককে বলেন, সার্ভারের অবস্থা আগের মতোই রয়েছে। ফলে সিএন্ডএফসহ সংশ্লিষ্ট বন্দর ব্যবহারকারীরা যেসব জটিলতার মুখোমুখি হচ্ছেন, তা হলো বাফারিং, স্লো মুভমেন্ট এবং ঘনঘন শাটডাউন। এসব কারণে দিনের কাজ দিনে সম্পন্ন করা যায় না। কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। বিষয়গুলো এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দফায় দফায় অবহিত করা হয়েছে।

কাজী বিলু আরো বলেন, পরিস্থিতি এমন হয়েছে, একটি কমান্ড দিয়ে কম্পিউটারের সামনে বসে থাকতে হয় দীর্ঘ সময়। অথচ দেশের বন্দরসমূহের অটোমেশনের জন্য ইনস্টল করা ‘আসাইকুডা ওয়ার্ল্ড’ নামের সফটওয়্যারটি একটি বিশ্বমানের এপ্লিকেশন। এনবিআরের কেন্দ্রীয় সার্ভারের দুর্বলতা ও জটিলতার কারণে সরকারি সংস্থা ও বন্দরের স্টেকহোল্ডাররা এই সফটওয়্যারের মাত্র ১০ শতাংশ ব্যবহার করতে পারছেন। বাকি ৯০ শতাংশ সুবিধা থেকে যাচ্ছে অব্যবহূত।

 

বিশেষজ্ঞদের মতে, সার্ভার জটিলতার কারণে এই সফটওয়্যারের সবগুলো মডিউল একসঙ্গে ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, এই সমস্যা সমাধানে এনবিআরের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে যে দুইটি পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল তার মধ্যে রয়েছে, কেন্দ্রীয় সার্ভারের শক্তি বৃদ্ধিকরণ, বিকল্প হিসেবে একাধিক সার্ভার স্থাপন। শোনা গিয়েছিল সার্ভার উন্নয়নে প্রায় তিন-চার বছর আগে এনবিআর ৪০০-৫০০ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কিন্তু এখনো তার কোনো ইতিবাচক ফলাফল দেখা যাচ্ছে না।

সিএন্ডএফ নেতা কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে দেশে লকডাউন ঘোষিত হলেও, জরুরি সেবা হিসেবে বন্দর সচল রয়েছে। ফলে কাস্টমস হাউজ কর্তৃপক্ষ এবং সিএন্ডএফসহ সব স্টেকহোল্ডাররাই বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে রাত-দিন কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, সার্ভারের ধীরগতির অভিযোগ তো দীর্ঘদিনের। কিন্তু এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ঘনঘন সার্ভার বন্ধ হয়ে যাওয়া বা শাটডাউনের মতো জটিলতা।

 

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজের কমিশনার ফখরুল আলম ইত্তেফাককে আরো বলেন, প্রায় ২৫/৩০ কোটি টাকা খরচে সেন্ট্রাল সার্ভারের শক্তিবৃদ্ধিসহ অটোমেশনের উন্নয়নে এই বছরের জুন-জুলাই মাসেই নতুন যন্ত্রপাতি বসছে। সার্ভারে বর্তমানে যেসব ইনস্ট্রুমেন্ট রয়েছে সেগুলো প্রায় ১২/১৩ বছরের পুরোনো হয়ে গেছে।