ইস্তিগফারের যত ফজিলত

গুনাহ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করার নামই ইস্তিগফার। মানুষ যতই গুনাহ করুক, মহান আল্লাহর কাছে একনিষ্ঠচিত্তে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহ তা ক্ষমা করেন। ইস্তিগফারের পার্থিব ও অপার্থিব অনেক ফজিলত আছে। নুহ (আ.)-এর দাওয়াত সম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি বলেছি, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, তিনি তো মহাপরাক্রমশালী। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন। তিনি তোমাদের সম্পদ, সন্তান দিয়ে সমৃদ্ধ করবেন এবং তোমাদের জন্য উদ্যান ও প্রবাহিত নদ-নদী স্থাপন করবেন।’ (সুরা : নুহ, আয়াত : ১০-১২)

অতীত ও বর্তমানের তাওবা : প্রকৃত ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে তাওবা সম্পন্ন হয়। এর একটি অপরটির পরিপূরক। আল্লামা ইবনুল কায়্যিম (রহ.) বলেন, দুই ধরনের গুনাহ আছে। এক ধরনের গুনাহ অতীতে সংঘটিত হয়েছে। এর ইস্তিগফার হলো, গুনাহর অনিষ্টতা থেকে পরিত্রাণ চাওয়া। আরেক ধরনের গুনাহ, যা ভবিষ্যতে হওয়ার আশঙ্কা আছে। এর তাওবা হলো, তা আগামী দিনে না করার দৃঢ়প্রতিজ্ঞা করা। তা ছাড়া তাওবার মাধ্যমে অগাধ কল্যাণ লাভ হয়। (মাদারিজুস সালিকিন : ১/৩০৮)

ইস্তিগফার সব সময়ের আমল : মানুষ যেকোনো সময় পাপ করতে পারে। তাই সর্বদা ইস্তিগফার করা চাই। হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে আমার বান্দারা, তোমরা রাতে-দিনে পাপাচারে লিপ্ত থাকো। আমি তোমাদের সবার গুনাহ ক্ষমা করি। অতএব তোমরা আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, আমি তোমাদের ক্ষমা করব।’ (মুসলিম)

ক্ষমা প্রার্থনার পুরস্কার জান্নাত : আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমার দিকে অগ্রসর হও এবং ওই জান্নাতের দিকে, যার প্রশস্ততা আকাশ ও পৃথিবীর মতো, যা তাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে, যারা আল্লাহ ও রাসুলের প্রতি ঈমান এনেছে। তা আল্লাহর অনুগ্রহ, তিনি যাকে ইচ্ছা তাকে তা প্রদান করেন।’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ২০)

আল্লাহ ক্ষমা প্রার্থনাকারীকে ভালোবাসেন : মানুষ আল্লাহর অবাধ্য হয়ে পাপ করতে পারে। তবে পাপকাজ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করা সবার জন্য জরুরি। অপর হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, ‘ওই সত্তার শপথ, যার হাতে আমার প্রাণ, যদি তোমরা গুনাহ না করো, তাহলে আল্লাহ তোমাদের নিয়ে যাবেন এবং এমন জাতি আনবেন, যারা গুনাহ করবে, অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। আর তিনি তাদের ক্ষমা করবেন।’ (মুসনাদে আহমদ ও মুসলিম)

ক্ষমা প্রার্থনার সঙ্গে চাই দৃঢ়তা : আল্লাহর সব ধরনের দুঃখ-কষ্ট সহ্য করেও মুমিনরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। মুমিনদের গুণাবলি বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের একমাত্র কথা ছিল, হে আমাদের রব, আমাদের পাপ ও আমাদের কাজের সীমা লঙ্ঘন তুমি ক্ষমা করো, আমাদের সুদৃঢ় রাখো এবং কাফিরদের বিপক্ষে আমাদের সহায়তা করো।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৪৭)

রাতের শেষভাগে ক্ষমা প্রার্থনা : আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার সর্বোত্তম সময় হলো রাতের শেষভাগ। শেষরাতে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা মুমিনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মুত্তাকিরা ওই দিন প্রস্রবণবিশিষ্ট জান্নাতে অবস্থান করবে। তাদের রব প্রদত্ত সব নিয়ামত তারা উপভোগ করবে। কারণ পার্থিব জীবনে তারা সৎকর্মশীল ছিল। তারা রাতের খুব অল্প অংশ ঘুমাত। তারা শেষ প্রহরে ক্ষমা প্রার্থনা করত।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ১৫-১৮)

ক্ষমা চাইতেন নবীজি (সা.) : আল্লাহ নবীজি (সা.)-এর জীবনের সব ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দেওয়ার পর এবং তাকে সব ধরনের ভুলত্রুটির ঊর্ধ্বে রাখার পরও রাসুল (সা.) প্রতিদিন অসংখ্যবার ইস্তিগফার করেন। হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘আমি প্রতিদিন একশত বার আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করি।’ (সহিহ বুখারি ও মুসলিম)

আল্লাহ সবাইকে ক্ষমা প্রার্থনা করার তাওফিক দিন। আমিন।