অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহারে সতর্কতা কেন জরুরি

 

অ্যান্টিবায়োটিক এখন আর শুধু ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনের বিষয় নয়। হাতুড়ে ডাক্তার তো বটেই, সাধারণ মানুষের কাছেও সহজলভ্য হয়ে উঠেছে এই অ্যান্টিবায়োটিক। একটু অসুস্থ বোধ করলেই লোকজন গোগ্রাসে গিলছে অ্যান্টিবায়োটিক; শিশুরাও বাদ যাচ্ছে না। একটু জ্বর হলেই অনেক অভিভাবক তাঁর সন্তানদের বোতল বোতল অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করাচ্ছেন।

আমাদের ও তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে  অজ্ঞতা এবং অনেক ক্ষেত্রে দায়িত্বহীনতার কারণে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স (প্রতিরোধ্যতা) তৈরি হচ্ছে মানুষের শরীরে।

যেভাবে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়

ব্যাকটেরিয়া তার জেনেটিক মিউটেশনের মাধ্যমে প্রতিরোধক হয়ে ওঠে। একটি ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধক হওয়ামাত্রই তা বিভিন্নভাবে অন্য ব্যাকটেরিয়াকেও প্রতিরোধক করে ফেলে। কখনও প্লাসমিডের মাধ্যমে, আবার কখনও বা জাম্পিং জিনের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়া এ কাজ করে। অ্যান্টিবায়োটিকের ভুল ব্যবহারে এমনটা হয়। ওষুধের ডোজ ভুল হওয়া বা পর্যাপ্ত দিন পর্যন্ত ওষুধ সেবন করা না হলে এবং সর্বোপরি সঠিক অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করা না হলে এ ধরনের বিপত্তি দেখা দিতে পারে। প্রথম দুটো ভুল নিজেরা সংশোধন করতে পারলেও তৃতীয়টির জন্য চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া এবং প্রয়োজনীয় ইনভেস্টিগেশনের বিষয়টি যুক্ত।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু আমাদের দেশে আইন মানা হয় না। এনটেরিক ফিভার বা টাইফয়েড জ্বরের জন্য একসময় সিপ্রোফ্লক্সাসিন নামে অ্যান্টিবায়োটিক যথেষ্ট কার্যকর থাকলেও এখন আর আগের মতো কাজ করে না। শুধু অনুমানের ভিত্তিতে ওষুধ ব্যবহারের জন্যই এমনটা হয়েছে। এখন টাইফয়েড রোগের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন হয় তৃতীয় প্রজন্মের সেফালোস্পোরিন গ্রুপের অ্যান্টিবায়োটিক। অনেক ক্ষেত্রে মুখে ওষুধ দিয়ে তেমন কাজ হয় না, তখন বাধ্য হয়ে শিরাপথেও ওষুধ দিতে হয়। রেজিস্ট্যান্স তৈরি হয়েছে কোট্রাইমোক্সাজল, টেট্রাসাইক্লিনসহ কম দামের নানা কার্যকর অ্যান্টিবায়োটিকের। টিবি রোগীরাও ইদানীং ব্যাপক হারে অ্যান্টিবায়োটিক রেজিস্ট্যান্সের শিকার হচ্ছেন। করোনাভাইরাসের চিকিৎসার নামে অ্যাজিথ্রোমাইসিনের মতো শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিকও মুড়ি-মুড়কির মতো ব্যবহৃত হচ্ছে। যতই কাছের মানুষ হোক না কেন, কম্পাউন্ডার বা সেলসম্যানের পরামর্শে ডায়রিয়ায় মেট্রোনিডাজল, কফ কাশি হলে সেফ্রাডিন– এসব  ওষুধ সেবন করা যাবে না। মনে রাখতে হবে, রোগ নিরাময়ে অ্যান্টিবায়োটিক বহু গবেষণা আর ট্রায়ালের পর তবেই ব্যবহৃত হয়। অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ যেন মামুলি দাওয়াই হিসেবে ব্যবহৃত না হয়, সেদিকে সবার নজর রাখা জরুরি।

লেখক : বিভাগীয় প্রধান, শিশু কার্ডিওলজি বিভাগ, জাতীয় হদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল।